প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে এ ভাবেই নমস্কার বিনিময় মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
শাসক শিবিরের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাতের ছায়া স্পষ্ট হল প্রজাতন্ত্র দিবসের সরকারি মঞ্চে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দৃশ্যতই দূরত্ব স্পষ্ট হল বুধবার রেড রোডের অনুষ্ঠানে। সভাস্থলে এসে রাজ্যপাল ধনখড় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে নমস্কার জানালে মুখ্যমন্ত্রীও প্রতি নমস্কার জানান। তবে রাজ্যপালের প্রতি বিশেষ মনোযোগী বলে মনে হয়নি তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রীর দিকে ঝুঁকে রাজ্যপালকে কিছু বলতে দেখা যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে সেই সময়েও ‘উদাসীন’ দেখিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যায় রাজ্যপালের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য পাশে দাঁড়ানো বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছে ডেকে বসতে বলতে। মঞ্চ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়ে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর ফের নমস্কার বিনিময় হয়। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী, স্পিকার-সহ রাজ্য প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন রাজ্যপাল। রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা, প্রজাতন্ত্র দিবসে ‘শৈত্যের পরিবেশ’ তারই প্রতিক্রিয়া।
সরকারি ওই অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ ঘিরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজ্যে বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় টুইটে মন্তব্য করেছেন, নন্দীগ্রামে পরাজয়ের জ্বালা মুখ্যমন্ত্রীকে নিশ্চয়ই এখনও ভোগাচ্ছে! কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর গণতান্ত্রিক রেওয়াজ মেনে চলা উচিত। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও এ দিন নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, ‘‘এখানে কোনও আমন্ত্রণ লাগে না!’’ রাজ্যপাল প্রজাতন্ত্র দিবসে সৌজন্য দেখালেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রতি শিষ্টাচার না করে প্রোটোকল লঙ্ঘন করেছেন বলেও টুইটে ভিডিয়ো-সহ অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘করোনা পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠান সীমাবদ্ধ ছিল, মন্ত্রীরাও সেখানে ছিলেন না। বিরোধী দলনেতাকে অসম্নানের কিছু নেই। ডাকা হলে তিনি সরকারি বৈঠক বা কর্মসূচিতে আসেন না, আবার না ডাকা হলে অসম্নান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।’’ আর রাজ্যপাল প্রসঙ্গে পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট সৌজন্য দেখিয়েছেন। রাজ্যপাল প্রতিদিন যা করছেন, ওঁর বিরুদ্ধে আমরা তো এ বার নিন্দা প্রস্তাব আনব বিধানসভায়।’’
তবে এই বিষয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এই সরকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই বিরোধীদের ডাকে না। এখন যিনি বিরোধী নেতা, আগে মুখ্যমন্ত্রীর দলে থেকেই সে সব দেখেছেন। এখন বিরোধী দলনেতার আসনে বসে প্রতিবাদ করছেন।’’