Mamata Banerjee Furfura Sharif

দুর্গাপুজো-কালীপুজো করলে তো প্রশ্ন ওঠে না, এখন প্রশ্ন কেন? ফুরফুরা থেকে মমতার বার্তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির

কৌতূহল ছিল পিরজাদা তথা আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি এবং তাঁর দাদা পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি মমতার অনুষ্ঠানে থাকেন কি না তা নিয়ে। কিন্তু দু’জনের কেউই রইলেন না।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ১৯:০৯
Share:
CM Mamata Banerjee gave a message of maintaining harmony in the state from Furfura Sharif\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s iftar party

সোমবার ফুরফুরা শরিফের ইফতারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

ফুরফুরা শরিফের ইফতার থেকে বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিকালে হুগলির ফুরফুরায় পৌঁছোন মমতা। তাঁর উদ্যোগে নির্মিত মেহমানখানায় ইফতারের আয়োজন হয়েছিল। সেখানেই সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় মমতা বলেন, ‘‘আমি দুর্গাপুজো-কালীপুজো করলে প্রশ্ন ওঠে না তো! তা হলে এখন প্রশ্ন উঠছে কেন? আমি সব ধর্মের সব অনুষ্ঠানে যাই। আমি ক্রিসমাসে যাই, গুরুদ্বারে যাই, রমজ়ানে যাই, ইফতারেও যাই। বাংলার মাটি সম্প্রীতির মাটি।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ফুরফুরায় গিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্য-সহ সরকারি আধিকারিকেরা।

সোমবার সকালে দিল্লি গেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিমানবন্দরে পৌঁছে মমতার ফুরফুরা সফর নিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘সব হিন্দুদের বলব ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) লাইভটা দেখতে।’’ বঙ্গ রাজনীতি মেরুকরণের যে অক্ষে প্রবেশ করেছে, শুভেন্দুর মন্তব্যকে সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখতে চেয়েছিলেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, বিকালে নাম না করে তারই জবাব দিয়েছেন মমতা।

Advertisement

দীর্ঘ প্রায় ন’বছর পরে ফুরফুরায় গেলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণেই এক জায়গায় হয়েছিলেন ফুরফুরার পিরজাদারা। তবে কৌতূহল ছিল পিরজাদা তথা ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি এবং তাঁর দাদা পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি মমতার অনুষ্ঠানে থাকেন কি না তা নিয়ে। কিন্তু দু’জনের কেউই রইলেন না। উল্লেখ্য, নওশাদকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল গত সপ্তাহেই। কারণ, নবান্নে গিয়ে একান্তে মমতার সঙ্গে মিনিট কুড়ি বৈঠক করেছিলেন তিনি। নবান্ন থেকে বেরিয়ে নওশাদের দাবি ছিল, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র ভাঙড়ে বিধায়ক তহবিলের অর্থখরচ নিয়ে ‘জটিলতা’ তৈরি হয়েছে বলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে সে কথা জানাতে গিয়েছিলেন। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলের অনেকের অবশ্য বক্তব্য ছিল, ওই কথা বলার জন্য সশরীরে নবান্নে যেতে হয় না। ২০ মিনিট সময়ও লাগে না। সে দিন থেকেই নানা জল্পনা ছিল। জল্পনা জিইয়ে ছিল সোমবার বিকাল পর্যন্ত। নওশাদ বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর বিকাল ৪টে নাগাদ তিনি বিধানসভা উত্তর ফটক দিয়ে বেরিয়ে যান। যে ফটক দিয়ে সাধারণত বিধায়কেরা প্রবেশ করেন। নওশাদ যে সময় বিধানসভা থেকে বার হন, তখন মমতার কনভয় প্রায় ফুরফুরার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নওশাদ ফুরফুরায় মমতার সঙ্গে থাকেননি। বাম-কংগ্রেসের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত প্রবীণ পিরজাদা ইব্রাহিম সিদ্দিকি ছিলেন না মমতার ইফতারে।

মমতার মঞ্চে এই প্রজন্মের পিরজাদারাই বেশির ভাগ বক্তৃতা করেছেন। বাংলায় পালাবদলের কয়েক বছর আগে থেকে মমতা সরকারে আসার পরে ফুরফুরার পিরজাদাদের মধ্যে ত্বহা সিদ্দিকের সঙ্গে তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল। ২০১৬ সাল পর্যন্ত সেই সমন্বয়ের কাজ করতেন মুকুল রায়। পিরজাদাদের মধ্যে ত্বহার ‘প্রভাব’ নিয়েও ফুরফুরায় আলোচনা ছিল। কিন্তু সোমবারের কর্মসূচি দেখে অনেকেই মনে করছেন, ত্বহার ‘প্রতাপ এবং প্রভাব’ আগের চেয়ে কমেছে। কর্মসূচি শুরুর আগে ত্বহা মাইক হাতে নিয়ে বলার চেষ্টা করেছিলেন, ইফতারের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ফুরফুরায় পৌঁছেছেন। তাই এই দিনে যেন কোনও দাবিদাওয়া না তোলা হয়। কিন্তু একের পর এক পিরজাদা যা যা বললেন, তাতে স্পষ্ট যে, ত্বহার সেই অনুরোধ বা আর্জিতে তাঁরা কান দেননি। যেমন মেহেরাব সিদ্দিকি দাবি করলেন পিরজাদা আবু বকর সিদ্দিকির নামে কিছু একটা করা হোক। নোরেল্লা সিদ্দিকি মুখ্যমন্ত্রীকে মঞ্চে বসিয়েই অভিযোগ করলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! উল্লেখ্য, ১৭ মার্চ পিরজাদা আবু বকর সিদ্দিকির প্রয়াণদিবস। এই দিনটিকে ছুটি হিসাবে ঘোষণা করারও দাবি উঠল ইফতারের মঞ্চ থেকে। আবার একাধিক পিরজাদা মমতাকে ‘বাংলার অভিভাবিকা’ বলেও সম্বোধন করলেন।

প্রসঙ্গত, নওশাদ-আব্বাসেরা বর্তমান প্রজন্মের পিরজাদা, যাঁরা তৃণমূলের বিরোধিতায় সরব। তাঁরা রাজনীতির ময়দানেও নেমেছেন। অনেকের বক্তব্য, এই প্রজন্মের আরও পিরজাদাদের মমতা জড়ো করে মঙ্গলবার নির্দিষ্ট ‘বার্তা’ দিতে পেরেছেন। মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ফুরফুরায় একটি পলিটেকনিক কলেজ হবে। সেই কলেজের নামকরণ হবে পিরজাদা আবু বকর সিদ্দিকির নামে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement