Mamata Banerjee

ভুল হয়েছে বললে আমরা সংশোধন করে দিতাম, ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি খেয়ে নেবেন? প্রশ্ন মমতার

হাই কোর্টের রায় ঘোষণার পরেই সোমবার রায়গঞ্জের সভা থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মমতা। মঙ্গলবারও ভাতারের জনসভা থেকে প্রতিবাদ জানান তিনি। সেই সঙ্গে জানালেন, কোথাও একটা ‘ভুল’ হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:০৮
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল নিয়ে মঙ্গলবারও প্রতিবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি জানালেন যে, কোথাও একটা ‘ভুল’ হয়েছে। কিন্তু তার জন্য কেন ‘চাকরি খাওয়া’ হল, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির দিকেও আঙুল তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী। জানালেন, আগে জানানো হলে তাঁরাই ভুল সংশোধন করে নিতেন। এ কথাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, সেই ‘ভুল’ তিনি করেননি। কারণ, সব দফতরই আলাদা।

Advertisement

কলকাতা হাই কোর্ট এসএসসি দুর্নীতি মামলার যে রায় দিয়েছে সোমবার, তাতে ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। রায় ঘোষণার পরেই রায়গঞ্জের জনসভা থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মমতা। মঙ্গলবারও ভাতারের জনসভা থেকে প্রতিবাদ জানান মমতা। সেই সঙ্গে জানান, ‘ভুল’ হয়েছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সেই ভুল সংশোধন করতে বললে তা করেও নিতেন। কিন্তু সে কারণে এত জনের চাকরি কেন বাতিল করা হল, সেই প্রশ্নই তুললেন তৃণমূলনেত্রী। মমতার কথায়, ‘‘যদি বলতেন, এখানে অসুবিধা রয়েছে, এটা তোমার ভুল হয়েছে, তোমরা সংশোধন করো, আমরা করে দিতাম।’’ কিন্তু মমতার দাবি, তা না করে ‘একতরফা রায়’ দিয়ে চাকরি বাতিল করা হল। ভুল হলেও সেই ভুল তিনি করেননি, সে কথাও স্পষ্ট করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ভুল তো যে কোনও কেউ করে দিতে পারে। সবটা কি আমি করি? আমি করি না। শিক্ষা দফতর আলাদা। এসএসসি আলাদা। প্রাথমিক বোর্ড, মাধ্যমিক বোর্ড, কলেজ কমিশন আলাদা রয়েছে। এগুলি (নিয়োগ) তারা দেখে।’’

তার পরেই মোদী সরকারকে আক্রমণের ধার বাড়িয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, ‘মোদীবাবু’ ভোট চাইলেও একটা লোককেও চাকরি দেননি। ভারতে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্টে তাঁরা যাঁদের চাকরি দিয়েছেন, আদালতের মাধ্যমে তাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। হাই কোর্ট যে কেন্দ্রের অধীনে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বাংলায় যখন চাকরি দিই, আপনারা কোর্টকে দিয়ে চাকরি খেয়ে নেন। ওরা (হাই কোর্ট) আমাদের অধীনে নয়। আপনাদের অধীনে।’’ বীরভূমের হাসনের জনসভাতেও এই চাকরি বাতিলের জন্য সরাসরি বিজেপিকে দায়ী করেছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির একটা কথায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। তাঁঁদের বলছে কি না ৮ বছরের মাইনে সুদ-সহ ফেরত দাও!’’ এত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে স্কুলে কারা পড়াবেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে শিক্ষক কোথায় আসবে? স্কুলে বাচ্চারা গিয়ে বসে থাকবে। সেখানে বিজেপির লোকেরা পড়াবে, না আরএসএস পড়াবে?’’

Advertisement

রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও তীব্র কটাক্ষ করেছেন তিনি। সোমবারের পর মঙ্গলবারও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কী ভাবে আদালত সোমবার যা রায় দেবে, তা গত শনিবার জেনে গিয়েছিলেন শুভেন্দু? গত সপ্তাহে তিনি কী ভাবে বলেছিলেন যে, ‘বোমা’ ফাটবে। প্রসঙ্গত, গত শনিবার শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, চলতি সপ্তাহে ‘বোমা’ ফাটানো হবে। কোনও তারিখ না জানালেও বিজেপি বিধায়ক দাবি করেন, ওই ‘বোমা’য় ‘বেসামাল’ হয়ে যাবে তৃণমূল। এ নিয়ে শুভেন্দুকে খোঁচা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘মানুষের চাকরি খেয়ে বোমা? এক দিন বুঝবি, আজ খুব গায়ের জোর না?’’ তৃণমূলনেত্রী এ দাবিও করেছেন যে, নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে, ইডি- সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গিয়েছেন শুভেন্দু। পুরুলিয়ায় চাকরি দুর্নীতি নিয়েও নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘পুরুলিয়ায় চাকরি কে বিক্রি করেছিল? যদি নাম বলি? নাম বলব না। আমার ইশারা যথেষ্ট।’’

চাকরি বাতিলের রায় নিয়ে মমতা আঙুল তুলেছেন বিচারপতিদের দিকেও। তাঁদের নেপথ্যে বিজেপি কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি টাকায় খাবে। সরকারি টাকায় চলবে। নিরাপত্তা নেবে। সরকারি টাকা সবটাই হজম করবে। আর বলবে, এক কলমের খোঁচায় সকলের চাকরি চলে গেল! আপনার নিজের ছেলেমেয়ের চাকরি গেলে ভাবতেন না?’’ মমতা তাঁদের উদ্দেশে এ-ও প্রশ্ন করেছেন যে, আজ যদি কেউ আত্মহত্যা করে, তার দায়িত্ব কি তাঁরা নেবেন? তবে তিনি চাকরিহারাদের পাশে রয়েছেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁদের হয়ে মামলা করে উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন মমতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement