ভবানী ভবনে বৈঠক

মুখ্যমন্ত্রীকে মাওবাদী ছায়াই দেখাল পুলিশ

নকশালপন্থী একাধিক গণ সংগঠনের উস্কানিতেই ভাঙড় উত্তপ্ত হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানালেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। বুধবার ভবানী ভবনে ঘণ্টাখানেকের এক বৈঠকে বিবিধ তথ্য তুলে ধরে তাঁরা মমতাকে বুঝিয়েছেন, বহিরাগতদের প্ররোচনায় পা দিয়েছেন ভাঙড়ের মানুষ।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৯
Share:

ভবানী ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার।ছবি: প্রদীপ আদক।

নকশালপন্থী একাধিক গণ সংগঠনের উস্কানিতেই ভাঙড় উত্তপ্ত হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানালেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। বুধবার ভবানী ভবনে ঘণ্টাখানেকের এক বৈঠকে বিবিধ তথ্য তুলে ধরে তাঁরা মমতাকে বুঝিয়েছেন, বহিরাগতদের প্ররোচনায় পা দিয়েছেন ভাঙড়ের মানুষ। বহিরাগতদের ইন্ধনে পুলিশ মার খেয়েছে, পুলিশের গাড়ি জ্বলেছে। আর এ সব শুনে মমতা নির্দেশ দিয়েছেন, ওই বহিরাগত ‘নকশাল বা মাওবাদী’দের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পুলিশের একাংশের দাবি, গোলমালের পিছনে শাসকদলের কোনও নেতার ইন্ধন থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নবান্নের খবর: বাহিনীর কর্তারা এ দিনের বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, পুলিশের গুলিতে নয়, ‘বহিরাগত’ বিক্ষোভকারীদের ছোড়া গুলিতেই এক ছাত্র-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, বহিরাগতদের মধ্যে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। নবান্ন চায় তাঁদের প্রতি কিছুটা নরম মনোভাব নিয়ে চলতে। কিন্তু নকশালপন্থী গণ-সংগঠনের বাকি সদস্যদের ‘মাওবাদী সংস্রব’ সংক্রান্ত তথ্য মিললে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) মামলা করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে পুলিশকর্তারা ঠিক করেছেন, নকশালপন্থী ছাত্র ও গণ সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরনো মামলাগুলো কী অবস্থায় রয়েছে, তা খুঁজে বার করা হবে। দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে সিআইডি-কে। তবে ‘ব্যবস্থা’র নামে ভাঙড়ের আমজনতার উপরে যাতে কোনও রকম নির্যাতন না হয়, সেটাও পুলিশকে মাথায় রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনের বৈঠকে তিনি কর্তাদের সে ব্যাপারে সর্তক করেন। সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের গোলমাল সামাল দিতে গিয়ে বাহিনী কতটা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে, পুলিশকর্তারা তা বিশদে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। মমতার নির্দেশ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত পুলিশকর্মীদের মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরপাকড় করা যাবে না।

Advertisement

বুধবার বাড়ি থেকে নবান্ন যাওয়ার পথে বেলা বারোটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী আচমকা গাড়ি ঘুরিয়ে ভবানী ভবনে ঢুকে পড়েন। সোজা চলে যান চারতলায়, সিআইডি-র এডিজি রাজেশকুমারের ঘরে। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি চলে আসেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এবং এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। ভবানী ভবন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানান, বৈঠক ছিল একদমই ‘রুটিন।’

ঘটনা হল, ওই বৈঠকের পরেই একাধিক নকশালপন্থী গণ সংগঠনের মোট কুড়ি সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: ভাঙড়ের অশান্তির পিছনে যাঁদের উস্কানি রয়েছে বলে অভিযোগ, তালিকায় মূলত তাঁদেরই নাম। ওঁদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে পুরনো মামলা। সিঙ্গুর ও নোনাডাঙা আন্দোলনেও তাঁরা যুক্ত ছিলেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি। পুলিশ বলছে, গণ সংগঠনের ওই ছেলে-মেয়েরা গত তিন মাস ভাঙড়ে ঘুরে ঘুরে গ্রিডের জন্য জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেছেন।

কিন্তু সে খবর পুলিশ কেন আগে পেল না? কেনই বা আঁচ পায়নি যে, পরিস্থিতি এমন ঘোরালো হতে চলেছে? এ সব প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পুলিশকর্তাদের কাছে মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement