Mamata Banerjee to Humayun Kabir

ধর্ম-তরজার রাজনীতি জারি, দলে মুখ বন্ধের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে ধর্ম ও জাত নিয়ে আলোচনায় বারবার তর্কে জড়িয়েছেন রাজ্যের শাসক ও বিরোধীরা। এই প্রশ্নে পরস্পরকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ০৮:০৬
Share:
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

মন্ত্রীদের যেমন খুশি ‘মুখ না খোলার’ নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সতীর্থদের বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। সেই সঙ্গেই তাঁর নির্দেশে ভরতপুরের দলীয় বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের কাছে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ব্যাখ্যা চেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পরিষদীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি।

বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে ধর্ম ও জাত নিয়ে আলোচনায় বারবার তর্কে জড়িয়েছেন রাজ্যের শাসক ও বিরোধীরা। এই প্রশ্নে পরস্পরকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সুর চড়িয়েছেন শাসক দলের মন্ত্রী ও একাধিক বিধায়ক। শুভেন্দু সংখ্যালঘু বিধায়কদের চ্যাংদোলা’ করে রাস্তায় ফেলার কথা বলায় তাঁকে পাল্টা ‘ঠুসে দেবেন’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূলের হুমায়ুন। প্রায় একই ভাবে ‘জবাব’ দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও। তার জেরেই দলের রাশ টেনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংযত ও সতর্ক থাকতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মন্ত্রীদের একাংশ মনে করছেন, ‘উস্কানিমূলক’ কোনও মন্তব্যের পাল্টা তেমন মন্তব্য শাসক নেতাদের গলায় শোনা গেলে তা প্রকারান্তরে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। শাসক দলের পক্ষে সেই পরিস্থিতি মোটেই কাঙ্ক্ষিত হবে না। দোলযাত্রা এবং হোলি উৎসব আজ, শুক্রবার থেকে। তার আগে মুখ‍্যমন্ত্রী এ দিন মন্ত্রীদের চোখ-কান খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। নিজেদের এলাকায় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতেও বলা হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশে অস্থিরতার সময়েও নেতা-মন্ত্রীদের বক্তব্যে সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

লোকসভা নির্বাচনের আগে হুমায়ুনের একটি সাম্প্রদায়িক মন্তব্য ঘিরে চূড়ান্ত বিতর্ক হয়েছিল। বহরমপুরের ভোটের আগে তৃণমূল অবশ্য তখন দলীয় বিধায়ককে সতর্ক করেনি। এ বারও সেই ঢঙেই তাঁর মন্তব্যের পরে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাঁর হুমকির সূত্র ধরেই বিজেপির সচেতক শঙ্কর ঘোষ বিরোধী দলনেতার উপরে ‘প্রাণঘাতী হামলা’র আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতেও নিজের অবস্থানে অনড় হুমায়ুনকে এ দিন ‘শো-কজ়’ করেছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ওই মন্তব্য সম্পর্কে হুমায়ুনকে নিজের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে। কয়েক মাস আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল এবং মুর্শিদাবাদে সব বিধানসভা এলাকায় বাবরি মসজিদ নির্মাণের কথা বলেছিলেন হুমায়ুন। সেই সময়েও দল ‘শো-কজ়ে’র চিঠি দিয়েছিল তাঁকে।

এই তরজায় এ দিনও বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিরোধী দল বিজেপির বিধায়কেরা। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির সচেতক শঙ্কর। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের বিধায়ক, মন্ত্রীরা হুমকি দিচ্ছেন। তাতে বিরোধীদের নিরাপত্তার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা চলতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে।’’ পাল্টা আক্রমণ করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘ভোটে হেরে হতাশ বিজেপি এখন মরিয়া হয়ে এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে চাইছে। বাংলার মাটিতে তা মুখ থুবড়ে পড়বে।’’

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু হিন্দু আবেগের প্রশ্নে তাঁর চড়া সুর অব্যাহতই রেখেছেন। পাঁশকুড়ায় এ দিন তিনি বলেছেন, ‘‘হাই কোর্ট করতে হয়েছে আমাদের ছেলেদের। হোলি উৎসবের জন্য। যে মাঠে করার কথা, পুরসভা দেয়নি। সকালে হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আমি এখন যাচ্ছি ওখানে। ভবানীপুর বিধানসভায় রাস্তায় দোল পালন করব।’’ বাংলাদেশ ও সরস্বতী পুজোর সময়ে এ রাজ্যের কিছু ঘটনা তুলে ফের ‘হিন্দু জাগরণে’র ডাক দিয়ে শুভেন্দুর আরও মন্তব্য, ‘‘আমি এত দিনের জনপ্রতিনিধি। কখনও দেখিনি, দোল পূর্ণিমার সময়ে থানায় সমন্বয় বৈঠক হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অনিচ্ছুকদের রং দেবেন না। কারা অনিচ্ছুক, তাঁরা গলায় লিখে বেরোবেন যে, ‘আমায় রং দেবেন না’! না হলে আমরা চিনব কী করে কে ইচ্ছুক আর কে অনিচ্ছুক?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন