এক শ্রেণির মুনাফালোভী কর্পোরেট হাসপাতালের রোগী-শোষণ রুখতেই নতুন ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইন এবং স্বাস্থ্য কমিশন তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। এর জন্য ওই আইন বা কমিশনকে ‘ডাক্তার-বিরোধী’ মনে করার কোনও কারণ নেই। সোমবার নবান্নে আয়োজিত বৈঠকে এ কথা জানিয়েই চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর কেন্দ্রীয় শাখার কর্তাদের আশ্বস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্ন সূত্রের খবর, চিকিৎসায় গাফিলতির মামলায় অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত চিকিৎসককে যাতে একাধিক বার একই রোগীকে ক্ষতিপূরণ দিতে না-হয়, সেই বিষয়েও সরকার চিন্তাভাবনা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওঁদের কিছু প্রশ্ন ছিল। আলোচনা হয়েছে। ওঁরা আলোচনায় খুশি এবং সন্তুষ্ট।’’
নতুন ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইন ও স্বাস্থ্য কমিশন চালু হওয়ার পরেই চিকিৎসকদের একাংশ তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তাঁদের আশঙ্কা, ওই আইন এবং কমিশন ডাক্তার-স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে উঠবে এবং আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চিকিৎসকেরাই। ওই আইন ও কমিশনের প্রতিবাদে সরব হয়েছিল আইএমএ-র কেন্দ্রীয় শাখাও। রাজ্য শাখা অবশ্য প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে আসছে। তাই এ ব্যাপারে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাখার মধ্যে কার্যত অঘোষিত লড়াইও শুরু হয়ে যায়। রাজ্য শাখা তৃণমূল-ঘেঁষা আর কেন্দ্রীয় শাখা মূলত বিজেপি-পন্থী। ফলে লড়াইয়ে রাজনৈতিক রং ধরে গিয়েছে অবধারিত ভাবেই।
নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে আইএমএ-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি ছিলেন না। পরে তিনি মত বদলান। কিন্তু কয়েক বার বৈঠকের তারিখ ঠিক হওয়ার পরেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আইএমএ-র রাজ্য নেতৃত্ব মধ্যস্থের ভূমিকা নেন। কারণ কেন্দ্রীয় শাখার সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে নেওয়া এবং চিকিৎসকদের ভরসা দেওয়ার একটা তাগিদ রাজ্য শাখার নেতাদেরও ছিল। আইএমএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি কৃষ্ণকুমার অগ্রবালের সঙ্গে রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তনু সেনও ছিলেন এ দিনের বৈঠকে।
বৈঠকের পরে অগ্রবাল নবান্নে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, নতুন কমিশন মোটেই ডাক্তার-বিরোধী নয়। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ মেডিক্যাল কাউন্সিলেই যাবে। তারাই তদন্ত করবে। রিপোর্ট পাঠাবে কমিশনের কাছে। আর হাসপাতালের কাজকর্মের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে সেটা প্রথমে দেখবে হাসপাতালের গ্রিভান্স সেল। তার পরে প্রয়োজন হলে তা কমিশনে পাঠানো হবে।’’
শান্তনু সেন জানান, এ রাজ্যে ডাক্তারদের উপরে কোনও অত্যাচার হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বারবার অভয় দিয়েছেন। ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানেন যে, ৯৯ শতাংশ চিকিৎসকই সৎ। মাত্র কয়েক জন অসৎ ডাক্তার আর কিছু লোভী কর্পোরেট হাসপাতালের জন্য তাঁকে কমিশনের কথা ভাবতে হয়েছে,’’ বলেন শান্তনুবাবু। কেন্দ্রীয় শাখার সঙ্গে তাঁদের যাবতীয় ভুল বোঝাবুঝিরও অবসান হয়েছে বলে জানান আইএমএ-র রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক। আইএমএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি নবান্নেই ঘোষণা করেন, অ্যাপোলো হাসপাতালের পূর্ববর্তী মহিলা সিইও-র বিরুদ্ধে জোর করে ডাক্তারদের নিজের বুটিকের শাড়ি কেনানোর যে-অভিযোগ উঠেছিল, তার তদন্ত করবে রাজ্য আইএমএ। শান্তনুবাবুও জানান, দু’দিনের মধ্যে তিনি এর রিপোর্ট জমা দেবেন।