গাছতলায় ‘শান্তি’র পঠনপাঠন দেগঙ্গায়

স্কুলটির পাশেই রয়েছে মজে যাওয়া পদ্মা খাল। তার পাড়ে উপড়ে পড়েছিল শতাব্দীপ্রাচীন একটি গাছ। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকলেও সবুজ পাতায় ভরা সেই গাছটির বিশাল কাণ্ডও ছড়িয়ে পড়ে মাটির উপরে।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০২:১৪
Share:

অভিনব: গাছের ছায়ায় বসেই চলছে ক্লাস। দেগঙ্গার নছিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

একে প্রচণ্ড গরম। তার উপরে ঘন ঘন লোডশেডিং। স্কুলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল পড়ুয়ারা। স্কুলছুটের সংখ্যাও বাড়ছিল। এর থেকে রেহাই পেতে স্কুলের বাইরে মজে যাওয়া পদ্মা খালের ধারে প্রকাণ্ড এক গাছের ছায়ায় পঠনপাঠন চালু করলেন শিক্ষকেরা। ফলও মিলল হাতেনাতে। দমবন্ধ ঘরের বদলে নতুন খোলা পরিবেশে স্কুল পেয়ে খুশি পড়ুয়ারাও। এমনটাই ঘটেছে দেগঙ্গার চৌরাশি পঞ্চায়েতের নছিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

Advertisement

গরমের ছুটির মেয়াদ দু’মাস করায় রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। প্রতিবাদে পথে নেমেছিল শিক্ষক সংগঠন, সরব হয়েছিলেন অভিভাবকেরাও। অবশেষে ১০ জুন থেকে রাজ্যে সমস্ত স্কুল খোলার নির্দেশ দেয় শিক্ষা দফতর। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার দু’টি সার্কেলে মোট ১৬৮টি প্রাথমিক স্কুল আছে। দেগঙ্গার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিদর্শক মহম্মদ হাবিবুল্লা বলেন, ‘‘দু’মাস গরমের ছুটি আগেই ঘোষণা হওয়ায় অনেক ছাত্রছাত্রী জানতেই পারেনি যে ছুটি বাতিল হয়েছে। তাতে সমস্যা হয়।’’

বেশ কিছু স্কুলে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার কম হওয়ায় প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ুয়াদের নিয়ে আসার জন্য শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের নির্দেশ দেন স্কুল পরিদর্শক। ছুটি কাটিয়ে স্কুল খুলতে শুরু করলেও তাপপ্রবাহ না কমায় স্কুলে এসে হাঁসফাঁস অবস্থায় পড়ে পড়ুয়ারা। কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়ে। শিক্ষক-শিক্ষিকারাই জানিয়েছেন, এর সঙ্গে রয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। ফলে অভিভাবকেরা তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছিলেন।

Advertisement

এই অবস্থায় প্রাকৃতিক পরিবেশে পঠনপাঠনের ভাবনাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ভাবে বিশ্বভারতীতে গাছের ছায়ায় লেখাপড়া চালু করেছিলেন, সেই ভাবনা থেকেই স্কুলের বাইরে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেন ওই স্কুলের শিক্ষকেরা। স্কুলটির পাশেই রয়েছে মজে যাওয়া পদ্মা খাল। তার পাড়ে উপড়ে পড়েছিল শতাব্দীপ্রাচীন একটি গাছ। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকলেও সবুজ পাতায় ভরা সেই গাছটির বিশাল কাণ্ডও ছড়িয়ে পড়ে মাটির উপরে।

সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সেই গাছের নানা ডালের উপরে-নীচে বসে চলছে লেখাপড়া। সামনে চেয়ার নিয়ে বসে শিক্ষক অঙ্কন সরকার। তিনি বলেন, ‘‘এত গরমে স্কুলের ক্লাসঘর প্রায় বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকায় কষ্ট পাচ্ছিল ছেলেমেয়েরা। এখন এ ভাবে ক্লাস হচ্ছে বলে সবাই স্কুলে আসছে। স্বস্তিও মিলছে।’’

নদী, গাছ, পাখি আর এলাকার পরিবেশের সঙ্গেও পড়ুয়াদের পরিচয় ঘটছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। এই ঘটনা জানার পরে স্কুল পরিদর্শক অবশ্য বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন ওই স্কুলের শিক্ষকেরা। এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement