পুরুলিয়া আদালতের নির্দেশে সন্দীপ-সহ ২০ জনকে নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে সিআইডি। প্রাথমিক জেরায় তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, গত পাঁচ বছর ধরে প্রতারণা চক্র চালাচ্ছিলেন তিনি।
প্রতীকী ছবি।
একটি-দুটি নয়, কলকাতার বুকে উনিশটি ভুয়ো কলসেন্টার খুলেছিলেন সন্দীপ বিশ্বাস। সেখান থেকেই বিমা, মোবাইলের টাওয়ার বসানোর নামে লোক ঠকানোর কারবার চলত বলে অভিযোগ। তার মধ্যে একটি কলসেন্টার ছিল খোদ লালবাজারের উল্টো দিকে। তবু এত দিন পুলিশ ‘টের’ পায়নি। শেষমেশ সিআইডির হাতে ধরা পড়েছে চক্রটি। তদন্তকারীদের সূত্রের খবর, সন্দীপের বাবা কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর। আইনরক্ষকদের হাত থেকে বাঁচতে সেই পিতৃপরিচয় সন্দীপের ঢাল হয়েছিল কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে ভবানী ভবনের অন্দরে। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, তল্লাশির সময়েও সন্দীপ নিজের কর্মীদের কাছে দাবি করেছিলেন যে পুলিশের সঙ্গে তাঁর ‘যোগাযোগ’ আছে। তাই কোনও ভয় নেই।
সিআইডি সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার কেন্দা থানা এলাকার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন মাহাতোকে প্রতারণা করে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন অভিযুক্তেরা। সেই মামলার তদন্তে নেমেই এই চক্রের খোঁজ পান গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার লালবাজারের উল্টো দিকের একটি বহুতলে হানা দিয়ে সন্দীপ-সহ ২০ জনকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। এর বাইরে বৌবাজার, শেক্সপিয়র সরণি-সহ আরও ১৮টি অফিস রয়েছে তাঁর। প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকায় প্রায়ই অফিস বদল করতেন সন্দীপ। এ ভাবে অফিস চালালেও কলকাতা পুলিশ কেন টের পেল না, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। তল্লাশির সময় সন্দীপের মুখে ‘পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের’ কথা শুনে সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে সিআইডির গোয়েন্দাদের।
পুরুলিয়া আদালতের নির্দেশে সন্দীপ-সহ ২০ জনকে নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে সিআইডি। প্রাথমিক জেরায় তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, গত পাঁচ বছর ধরে প্রতারণা চক্র চালাচ্ছিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত সন্দীপের সাতটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। গত কয়েক মাসে ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে পুলিশের সন্দেহ, এমন আরও অনেক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই প্রতারণা চক্রে সন্দীপের হাত দিয়ে অন্তত ৩০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে সন্দীপ এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি-সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। তার সঙ্গে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪১৩ ধারা যুক্ত করতে চান তদন্তকারীরা। ওই ধারা অনুযায়ী, সজ্ঞানে চোরাই সম্পত্তি ব্যবহারের দায়ে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাবাস হতে পারে।l উদয়পুর