অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিশুকন্যাকে কেউ ধর্ষণ করলে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ কর্মসূচির একটি ভিডিয়োয় (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) এমন হুমকি দেওয়ার জেরে উত্তর ২৪ পরগনার এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। এই বিষয়ে সোমবারই পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছিল রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। রাজ্যের নানা থানায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের তরফে অভিযোগ দায়েরও শুরু হয় এ দিন। ওই মন্তব্যের অভিযোগে মাসাদুল মোল্লা নামে মিনাখাঁর মঠবাড়ী এলাকার বাসিন্দা এক যুবককে গ্রেফতার করেছে ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ।
কমিশন জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ভিডিয়োয় ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করলে ১০ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করতে দেখা যাচ্ছে এক জনকে। এই প্রেক্ষিতে কমিশনের বক্তব্য, গোটা রাজ্যে একটি মর্মান্তিক ধর্ষণ ও খুনের আবহে আর একটি ধর্ষণের ডাক দেওয়ার মধ্যে সমাজের জন্য মারাত্মক বিপদ-সঙ্কেত রয়েছে। এই ধরনের ভিডিয়োর কথাগুলি অন্য নাবালিকাদের জন্যও বিপজ্জনক। সেই সঙ্গে পকসো আইন, জুভেনাইল জাস্টিস আইন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু অধিকার সংক্রান্ত চুক্তির ভিত্তিতে কমিশন এখনই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। ওই মন্তব্য ‘উস্কানিমূলক’, এমনটা জানিয়ে নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক বাপ্পাদিত্য গর্গ।
ভিডিয়ো সামনে আসার পরে পুলিশ অবশ্য মঠবাড়ী থেকে মাসাদুলকে গ্রেফতার করেছে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে দাবি, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবার বিকেলে আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া থেকে ঘটকপুকুর পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়ে মাসাদুল ওই মন্তব্য করেছিলেন। যদিও আইএসএফ-এর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, “দলগত ভাবে আমরা এই ধরনের মন্তব্য সমর্থন করি না। যিনি এই মন্তব্য করেছেন, দায় তাঁর।”
এই ঘটনাকে সামনে রেখে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “ভয়ঙ্কর ও চূড়ান্ত এক বিকৃত মানসকিতার প্রমাণ এটা। বিরোধীরা চুপ কেন? যে-ই বলে থাকুক, সে সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে।” যদিও বিরোধীরা পাল্টা রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “তীব্র নিন্দা করছি। যাঁরাই করে থাকুন, অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচয়। আমরা চাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ প্রত্যেকে মর্যাদা নিয়ে থাকুন। কিন্তু শুধু তিনি (মমতা) মর্যাদা নিয়ে থাকবেন আর এক জন গ্রামের মহিলার মর্যাদা থাকবে না, এটা যেন না হয়।” পাশাপাশি, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বলেছেন, “যারা ধর্ষণের হুমকি দেয়, তাদের বিরোধিতা করতে হবে। অভিষেক, মমতার বাড়ি সব চেয়ে নিরাপদ। কিন্তু এই ভিডিয়ো সামনে আসার পরে এফআইআর কেন হল না? আগে তো পুলিশ কাজ করবে। তা না করে টুইট করছে!”