রাজীব সিংহ।
সময় যাতে নষ্ট না-হয়, সেই জন্য ফোনেই গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের কাজ সেরে নেওয়ার ব্যবস্থা আগেই চালু করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। এ বার জেলা প্রশাসনিক বৈঠকের আগে যাত্রাপথেই সচিবদের ‘চলমান’ বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। সরকারি সূত্রের খবর, প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বাসেই ওই বৈঠক করবেন মুখ্যসচিব।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। প্রশাসনের প্রায় সব দফতরের সচিবকে উপস্থিত থাকতে হয় সেখানে। মুখ্যমন্ত্রী ভিন্ন মাধ্যমে জেলায় গেলেও প্রশাসনিক কর্তারা একসঙ্গে বাসেই যান। এ বার সেই বাসযাত্রাকে প্রশাসনিক সমন্বয় আরও বাড়ানোর হাতিয়ার করার ভাবনাচিন্তা চলছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে। এমনিতে একটি বাসে সচিব স্তরের এত জন অফিসার গেলে নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে হাল্কা সময় কাটানোর একটা সুযোগ থাকে। কেউ কেউ বই পড়ে সময় কাটান। দফতর-ভিত্তিক সমস্যা মেটানো বা সমন্বয়ের স্বার্থে কোনও দফতরের সচিব অন্য সচিবের সঙ্গে জরুরি বিষয়ে আলোচনায় ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু সকলকে নিয়ে প্রথাগত বৈঠক হয় না।
নবান্ন সূত্রের খবর, সচিবদের বাসে এমনিতেই মাইক্রোফোনের ব্যবস্থা থাকে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী বৈঠকের জন্য সেই মাইক্রোফোনের সুবিধা নেওয়া হবে। একসঙ্গে প্রায় সব দফতরের সচিব ওই বাসে থাকায় মুখ্যসচিবের পক্ষেও কিছু জরুরি বিষয়ে আলোচনা সেরে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘কলকাতার নানা প্রান্তে বিভিন্ন দফতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ফলে সকলকে একসঙ্গে পেতে হলে আলাদা বৈঠক ডাকতে হয়। নইলে যাঁর সঙ্গে কথা বলা দরকার, তাঁকে এত দিন নবান্নে ডেকে পাঠানো হত। জেলা সফরে সকলে এক বাসে থাকলে সেটা তো বিশেষ সুবিধা। একত্রে সকলের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সেরে ফেলতে পারবেন মুখ্যসচিব।’’ ডাকাডাকির ব্যাপারটা আগে ছিল। এখন দূরে থাকা কোনও সচিবকে না-ডেকে ফোন, ই-মেলেই কাজ সারেন মুখ্যসচিব।
প্রশাসনের অন্দরমহলের খবর, জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন দফতরের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় সচিবদের। সেই উত্তর অনেক সময় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, কখনও কখনও সেই জবাব তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। এমনকি তথ্য নিয়েও অতীতের কোনও কোনও বৈঠকে সমন্বয়ের কিছুটা অভাব দেখা দিয়েছে। বাসেই আলোচনা সেরে ফেললে সম্ভাব্য সব বিষয়ের উপরে প্রাথমিক একটা আলোচনা করে ফেলা যায়। ফলে মুখ্যমন্ত্রীকে নিখুঁত তথ্য এবং প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব হবে। এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বিভিন্ন কাজ শুধু একটি দফতরের উপরে অনেক সময়েই নির্ভর করে না। দু’টি বা তার বেশি দফতর সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয় থাকা খুব জরুরি। পাশাপাশি, সেই কাজকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির মধ্যে কোনও সমস্যা তৈরি হলে সময় নষ্ট না-করে সেটা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া গেলে সেটা তো লাভজনক।’’