মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতেও ফেরেনি শান্তি

দুই ব্লক কমিটি ভেঙে জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলকে ন’জনের কমিটির আহ্বায়ক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাসন্তী শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৩
Share:

উত্তেজনা: গুলিবিদ্ধ বাণেশ্বর।

জেলাস্তরের নেতৃত্বের ধমক-ধামকে কাজ হয়নি। রাজ্যস্তরের নেতাদের কথাও কানে ওঠেনি। মাস দে়ড়েক আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোসাবায় এসে বিবদমান দুই গোষ্ঠীর নেতাদের ডেকে উষ্মা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন। সকলকে মিলেমিশে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাসন্তীর নেতাদের কানে সে কথা উঠলে তো! ছাই চাপা আগুন নেভানো যায়নি কোনও ভাবেই। ছোটখাটো গোলমাল শেষমেশ রক্তারক্তি ঘটিয়েই ছাড়ল। বৃহস্পতিবার গুলিতে প্রাণ গেল দু’জনের। জখম জনা সাতেক।

Advertisement

গোসাবার জনসভা থেকে বাসন্তীতে দলীয় গোষ্ঠী সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের দুই বিধায়ক গোবিন্দ নস্কর (বাসন্তী) ও জয়ন্ত নস্করকে (গোসাবা) কোন্দল বন্ধ করতে নির্দেশও দেন। ‘উন্নয়নের প্রতিযোগিতা’য় নামার পরামর্শ দেন। ক্যানিং (পূর্ব)-এর বিধায়ক সওকত মোল্লাকেও সর্তক করেন।

দলের উপর মহলে যে কোন্দল গোবিন্দবাবু এবং জয়ন্তবাবুর মধ্যে, নিচুতলায় তারই প্রতিফলন দেখা যায় প্রাক্তন বাসন্তী ব্লক তৃণমূল সভাপতি মন্টু গাজি এবং প্রাক্তন ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি আমান লস্করের দলবলের লড়াইয়ে।

Advertisement

দুই ব্লক কমিটি ভেঙে জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলকে ন’জনের কমিটির আহ্বায়ক করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা-সহ একাধিক নেতাকে নির্দেশ দেন, যে ভাবেই হোক বাসন্তীকে শান্ত রাখতে হবে। কিন্তু দলের নিচুতলা পর্যন্ত যে সেই বার্তা পৌঁছয়নি, বৃহস্পতিবারের ঘটনা সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

বাহিনীর টহল বাসন্তীতে

তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছে, জয়ন্ত নস্করের খাসতালুক বাসন্তীতে গত বিধানসভা ভোটে গোবিন্দ নস্করকে টিকিট দেওয়ার পর থেকেই দুই গোষ্ঠীর লড়াই শুরু হয়েছে। চড়াবিদ্যা পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে। সেখানে দখল নিতে মরিয়া দলের যুব নেতৃত্বের একাংশ। এলাকা শান্ত রাখতে প্রতিমাদেবীকে মাথায় রেখে যে কমিটি গড়া হয়েছে, তা আসলে ‘পক্ষপাতমূলক’ হওয়ায় শান্তি ফেরানো ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের একাংশ।

চড়াবিদ্যা এলাকাটি রাজনৈতিক ভাবে বরাবরই স্পর্শকাতর। বাম আমলেও বহু হিংসার সাক্ষী এই এলাকা। আরএসপি বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ নস্করের বাড়িতে বোমাবাজিতে তাঁর এক আত্মীয়ার মৃত্যুও ঘটেছিল। তা ছাড়াও নানা সময়ে রক্ত ঝরেছে বাসন্তীর এই পঞ্চায়েত এলাকায়। সে ক্ষেত্রে বাসন্তীকে শান্ত রাখতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে আরও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ। না হলে রক্তের লড়াই বন্ধ হওয়ার নয়।

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আবার চড়াবিদ্যা পঞ্চায়েতের প্রধানের ছেলে তপু মাহাতোর নেতৃত্বে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে যুবরা। তপুকে গ্রেফতারের দাবিতে সন্ধের পর থেকে বাসন্তীর নানা এলাকায় অবরোধ শুরু হয়। নিহত হাসানকে যুব তৃণমূল বলে দাবি করে তার দেহ আগলে চলে অবরোধ। আমান লস্কর বলেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজনই এ দিন চড়াও হয়েছে আমাদের উপরে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা-গুলি ছুড়েছে ওরাই।’’ অন্য দিকে, মন্টুর কথায়, ‘‘সিপিএম থেকে আসা হার্মাদরা এলাকার দখল নিতে চেয়ে বার বার হামলা চালাচ্ছে। ওরাই গুলি-বোমা চালিয়েছে।’’

এই চাপানতোরের মধ্যেই শান্তি নামার লক্ষণ নেই বাসন্তীর জনজীবনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement