থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধৃত রাজীব ঘোষকে। নিজস্ব চিত্র।
সুকুমার রায় বেঁচে থাকলে আর এক ‘তৈরি ছেলে’র সন্ধান পেয়ে যেতেন। ‘জাল করে’ সই- তিনি আপাতত শ্রীঘরে। তবে যে য়ে লোকের সই নয়, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবের সই জাল করে বিধাননগর পুরসভাকে ঠকাতে গিয়েছিলেন বাগুইআটি এলাকার প্রমোটার রাজীব ঘোষ। এই জালিয়াতিকর্মের সঙ্গিনী জোনাকি বসুকেও আজ রাজীবের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, বাগুইআটির ঝিলপাড়া এলাকার একটি প্লটে পাঁচতলা ফ্ল্যাট করার পরিকল্পনা নেন ওই প্রমোটার রাজীব। ধৃত জোনাকি বসু ওই জমিটির মালিক। ফ্ল্যাট তৈরির অনুমতি পেতে বিধাননগর পুরসভায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং বিল্ডিং প্ল্যান জমা দেন। কিন্তু বিধানগর পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা প্ল্যান খতিয়ে দেখেন তাতে বেশ কিছু গলদ রয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়ে দেন বিল্ডিং মেকিং প্ল্যান নিয়মমাফিক হয়নি। বাড়ি তৈরির জন্য যেটুকু জমি ছাড় দেওয়া প্রয়োজন, এ ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হয়নি। এই কথা বিধাননগর পুরসভার তরফে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরেও বিল্ডিং তৈরির অনুমতি পেতে বারকতক বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্তের কাছে দরবার করেন ওই প্রমোটার। কিন্তু প্ল্যানিংয়ে গলদ রয়েছে জানতে পেরে তাঁর দাবি নাকচ করে দেন মেয়র।
আরও পড়ুন: গায়ে বোতলের বর্ম, ভরা পদ্মায় শঙ্করই সহায়
এর পর একদিন মেয়রকে একটা চিঠি দেন রাজীব। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের প্যাডে লেখা সেই চিঠের নীচে ছিল ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্য সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের’ সই। পুরসভার সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই চিঠিতে লেখা ছিল, ওই প্লটে বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ছাড় দিলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই তাঁকে যেন বাড়ি তৈরির অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়।
ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের প্যাডে ‘মুখ্যমন্ত্রীর সই’ দেখে সন্দেহ হয় পুরসভার কর্মীদের। এর পরেই সত্যতা যাচাই করতে ফোন যায় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর এবং নবান্নের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে। কিন্তু জানা যায় এমন কোনও চিঠি পাঠানোই হয়নি। এ দিন রাজীবকে পুরসভায় ডাকা হয়। আসার পরই তাঁকে সই জালিয়াতির অভিযোগে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জেরায় রাজীব পুলিশকে জানান, এই জালিয়াতি কাণ্ডে তাঁর সঙ্গে আছেন জমি মালিক জোনাকিও। পরে জোনাকিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। দু’জনের বিরুদ্ধেই প্রতারণা, ষড়যন্ত্র, নথিপত্র জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।