—ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারে জমিতে যে অনুমোদনহীন উদ্বাস্তু কলোনি আছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত অনুমোদনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কেন্দ্রের জমিতে যে সব কলোনি রয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রে এখনই কিছু হচ্ছে না।
বুধবার রানাঘাটের হবিবপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাসের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, রাজ্যের হাতে থাকা জমিতে অনুমোদনহীন কত উদ্বাস্তু কলোনি আছে? তাঁকে জানানো হয়, সমীক্ষা রিপোর্টে ১৫টি কলোনির কথা বলা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ওই কলোনিগুলির অনুমোদনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন মমতা। সেই সঙ্গেই তিনি বলেন,“কেন্দ্রের জমি বাদ দিন। ওরা কিছু শুনছে না।”
মঙ্গলবারই লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হয়েছে। এ দিন রানাঘাটে মমতা যখন বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের কলোনিগুলির অনুমোদন দেওয়ার কথা বলছেন, রাজ্যসভায় বিল নিয়ে বিতর্ক চলছে। যে বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের ফেরত পাঠানো বা জেলে পোরা যাবে না, কিন্তু মুসলিমদের সম্পর্কে কিছু বলা নেই।
নদিয়ায় এখন রাজ্যের উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের অনুমোদিত উদ্বাস্তু কলোনি রয়েছে ১১৮টি। অনুমোদন না পাওয়া কত কলোনি আছে, জেলা প্রশাসনকে তা সমীক্ষা করে তা জানাতে বলেছিল সরকার। প্রাথমিক ভাবে ১৫টির কথা বলা হলেও তা আরও বাড়বে বলে জানা গিয়েছে। এর সবই রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমার মধ্যে পড়ছে।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ওই সব কলোনিতে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুরা সরকারি জমিতে বাস করলেও জমির উপরে তাঁদের আইনি অধিকার নেই। জমির পাট্টা পাননি তাঁরা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “যত ক্ষণ না কলোনিগুলো উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের অনুমোদন পাচ্ছে, ততক্ষণ সেখানে বসবাস করা পরিবারগুলিকে পাট্টা বা আইনি বৈধতা দেওয়া যাবে না।”
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে উদ্বাস্তু ভোট ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি। তার বেশির ভাগই হিন্দু, বিশেষত মতুয়া সম্প্রদায়ের। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে অসম উত্তপ্ত হওয়ার সময়েই মতুয়ারা বিক্ষোভ-অবরোধ করেছেন। পাশে ছিল তৃণমূল। আবার হিন্দু ‘শরণার্থী’দের পাশে তারাই আছে দাবি করে মতুয়া ভোট টানতে নেমেছে বিজেপিও। মতুয়া এবং তফসিলি জাতি-জনজাতির মানুষদের ধর্মসভায় তাদের জড়ো হতে দেখা যাচ্ছে।
রাজ্যের জমির উদ্বাস্তু কলোনির অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশের মধ্যে রাজনীতিই দেখছে বিজেপি। দলের নদিয়া দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সভাপতি জগন্নাথ সরকারের কটাক্ষ, ‘‘এ সব ভোটের চমক দিয়ে আর উদ্বাস্তু ভোট ধরে রাখা যাবে না। তাঁরা জানেন, কারা তাঁদের পাশে আছে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা বাঙালি উদ্বাস্তুদের তাড়ানোর চেষ্টা করছে, তাদের মুখে উদ্বাস্তু প্রেম মানায় না।”