(বাঁ দিকে) উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। ‘শিক্ষাবন্ধু’র কার্যালয়ে আগুন (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আচমকা আগুন লাগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। জানা গিয়েছে, তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠন ‘শিক্ষাবন্ধু’র অফিসে হঠাৎ করেই আগুন লাগে। কী ভাবে আগুন লাগল তা এখনও জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়েছে। দীর্ঘ চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। জানা গিয়েছে, ওই ঘরে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার ছিল। ঠিক সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে না এলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেত পারত।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর আগুন। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল সর্মথিত কর্মী সংগঠনের অভিযোগ, এক দল দুষ্কৃতী তাঁদের কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর আহতদের দেখতে কেপিসি হাসপাতালে গিয়েছিলেন উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে কয়েক জন হেনস্থা করেন। তাঁর পাঞ্জাবিও টানাটানিতে ছেঁড়া হয়েছে। এই নিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘‘আমাকে দেখে হঠাৎ এক দল ছাত্রী তেড়ে আসে এবং আমাকে ধাক্কা মারে। কয়েক জন ছাত্রী আমার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দেয়।’’ তিনি আরও জানান, ওই ঘটনার সময় হাসপাতালে বেশ কয়েক জন ছাত্রও ছিলেন। তাঁরাই তাঁকে উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে দেন। উপাচার্যের কথায়, ‘‘আমার গাড়ির সামনে অনেক ছাত্র চলে আসে। কোনও রকমে আমি ওখান থেকে বেরিয়ে যাই। পড়ুয়াদের এই ঘটনায় আমি হতবাক।’’
পড়ুয়াদের উপর হামলা চালিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং তাঁর সঙ্গীরা। এমন দাবি করে হামলার নিন্দা করল এসএফআই।
শিক্ষামন্ত্রী এবং অন্য অধ্যাপকদের উপর হামলার প্রতিবাদ করে রবিবার প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিল তৃণমূল প্রভাবিত অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা। রবিবার দুপুর ২টোয় যাদবপুর এইটবি বাসস্ট্যান্ডে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে।
আগামী সোমবার রাজ্যের সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই।
হুঁশিয়ারির সুরে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “যদি মনে হয়, এক মিনিট সময় লাগবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। যারা শিক্ষামন্ত্রীর গায়ে হাত দেয়, অধ্যাপকদের গায়ে হাত দেয়, তাদের আমরা ছাত্র বলে মনে করি না। আজ শুধু শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ভাঙা হয়নি। শিক্ষামন্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এরা নিজেদের কী করে ছাত্র বলে দাবি করে, যারা গণতন্ত্র মানে না। এরা তৃণমূলকে ভয় পায়।”
শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির তলায় পড়ে এক পড়ুয়া জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে অরূপ বলেন, “ওসব বাজে কথা। ওরা মিথ্যা কথা বলছে।”
পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করতে জেনারেল বডি (জিবি)-র বৈঠকে বসলেন বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা।
ব্রাত্য বসুকে হেনস্থার ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার করার দাবিতে যাদবপুর থানার সামনে অবস্থানে বসল তৃণমূল।
শনিবার বেলায় যাদবপুরের ওপেন এয়ার থিয়েটারে ওয়েবকুপার বৈঠকে যোগ দেন ব্রাত্য। সেই বৈঠক শুরু হওয়ার আগে তৈরি হয় উত্তেজনা। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ ভোটের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই, আইসা, ডিএসএফ (ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস’ ফ্রন্ট)-এর সদস্যেরা। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পাল্টা মানববন্ধন তৈরি করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর সদস্যেরা। বৈঠকে যোগ দিতে এসে বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে পড়েন ব্রাত্য। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করিয়ে ওপেন এয়ার থিয়েটারের পিছন দিয়ে মঞ্চে তোলা হয়।
ব্রাত্য তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার বৈঠক সেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোচ্ছিলেন। সেই সময় ব্রাত্যের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেন ওই পড়ুয়ারা। গাড়ি থেকে নেমে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তাঁর সামনেই চলতে থাকে বিক্ষোভ। ওঠে ‘চোর-চোর’ এবং ‘গো ব্যাক স্লোগান’। পরে মন্ত্রীর গাড়ি এবং সঙ্গে থাকা দু’টি পাইলট কারে ভাঙচুর চালানো হয়। ভেঙে দেওয়া গাড়ির ‘লুকিং গ্লাস’ও। মন্ত্রী জানান, গাড়িতে ইট ছোড়া এবং হেনস্থার জেরে আহত হয়েছেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তিনি যান এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে।
পড়ুয়াদের বিক্ষোভ থেকে রেহাই পাননি অধ্যাপকেরাও। এক সময় প্রতিবাদী পড়ুয়াদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় ওয়েবকুপার সদস্যদের। যাদবপুরের অধ্যাপক তথা ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্রকে লাঠি হাতে তাড়া করেন বাম এবং অতি বাম সংগঠনের কয়েক জন পড়ুয়া। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ধস্তাধস্তির মধ্যে এক পড়ুয়ার মাথা ফেটেছে। আহত হয়েছেন দুই অধ্যাপক। এক মহিলা অধ্যাপকের শাড়ি ছেঁড়ার অভিযোগও উঠেছে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিল করল এসএফআই। মিছিলের সামনের ব্যানারে লেখা ‘শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চাই’। নতুন করে যাতে আর কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না-হয়, তার জন্য সামনে পাহারায় রইলেন র্যাফের সদস্যেরা।
যাদবপুর থানার সামনে অবরোধ তুলল পুলিশ। দীর্ঘ ক্ষণ সেখানে পথ অবরোধ করেছিলেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তৃণমূলের মিছিলের উল্টো দিকে হঠাৎই হাজির হন এসএফআই-এর কর্মী-সমর্থকেরা। দু’পক্ষের মধ্যে স্লোগান, পাল্টা স্লোগান চলতে থাকে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মিছিলে যোগ দিয়ে অরূপ বিশ্বাস বলেন, “গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। মাও-মাকুদের বলতে চাই, অশান্ত কোরো না। আমাদের প্রতিবাদ চলছে, চলবে। যাদবপুরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। সেই প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে। আগুন নিয়ে খেলতে যাবেন না। মানুষই ওদের যাদবপুর ছাড়া করেছে।”
যাদবপুরে নতুন করে উত্তেজনা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে নিগ্রহ করার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৭টায় সুকান্ত সেতু থেকে মিছিলের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। মিছিলে যোগ দেন যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস প্রমুখ। উল্টো দিকে হাজির হন বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর সদস্যেরা। এক সময় তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দু’পক্ষের মাঝে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে।