হিন্দুস্তান কেবলসকে ঘিরে ফের আশায় রূপনারায়ণপুর

কারখানা খোলার প্রশ্নে দেড় দশক পরে মিলেছে আশার বার্তা। এ বার হিন্দুস্তান কেবলসকে ঘিরে সুদিন ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে আসানসোলের রূপনারায়ণপুর। প্রায় বারো বছর উৎপাদনশূন্য থাকার পরে গত বছরের গোড়ায় ভারী শিল্প মন্ত্রকের এই কারখানাটি অধিগ্রহণে আগ্রহ দেখায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ওই মন্ত্রকের অধীন অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের তরফে সে বছর বার পাঁচেক কারখানা পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু লোকসভা ভোট এসে পড়ায় বিষয়টি আর এগোয়নি। লোকসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় রূপনারায়ণপুর এলাকায় গেলে তাঁর কাছে কারখানা পুনরুজ্জীবনের আর্জি জানান এলাকাবাসী।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০৩:২১
Share:

কারখানা খুলছে শুনে উচ্ছ্বাস। রূপনারায়ণপুরে। ছবি: শৈলেন সরকার

কারখানা খোলার প্রশ্নে দেড় দশক পরে মিলেছে আশার বার্তা। এ বার হিন্দুস্তান কেবলসকে ঘিরে সুদিন ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে আসানসোলের রূপনারায়ণপুর।

Advertisement

প্রায় বারো বছর উৎপাদনশূন্য থাকার পরে গত বছরের গোড়ায় ভারী শিল্প মন্ত্রকের এই কারখানাটি অধিগ্রহণে আগ্রহ দেখায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ওই মন্ত্রকের অধীন অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের তরফে সে বছর বার পাঁচেক কারখানা পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু লোকসভা ভোট এসে পড়ায় বিষয়টি আর এগোয়নি। লোকসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় রূপনারায়ণপুর এলাকায় গেলে তাঁর কাছে কারখানা পুনরুজ্জীবনের আর্জি জানান এলাকাবাসী। ভোটে জিতে বাবুলও ওই কারখানা খোলার ব্যাপারে দিল্লিতে তদ্বির করেন। সোমবার সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী ডি রামকৃষ্ণন জানিয়ে দেন, কারখানা খুলতে চলেছে।

বাবুল জানান, ২৭ জুন তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে এই কারখানা অধিগ্রহণের আবেদন জানান। ৯ জুলাই কেন্দ্রীয় ভারীশিল্প মন্ত্রী অনন্ত গীতের সঙ্গে দেখা করে কারখানার পুনরুজ্জীবন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। মন্ত্রীকে আবেদনপত্রও দেন। এর পরেই সোমবার কেব্লস কারখানার ভবিষ্যত নিয়ে হায়দরাবাদের এক সাংসদের প্রশ্নের উত্তরে ভারীশিল্প প্রতিমন্ত্রী আশার কথা শোনান। বাবুল বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কারখানা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তাঁরা আমার অনুরোধ রেখেছেন বলে ভাল লাগছে। ২৯ জুলাই দিল্লি ফিরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ভারী শিল্প মন্ত্রীকে মিষ্টিমুখ করাব।” বাবুলের দাবি, আসানসোলের রুগণ ও বন্ধ কারখানাগুলি বাঁচাতে যে পদক্ষেপ করেছেন, তাতে এটি তাঁর প্রথম সাফল্য। তিনি আরও জানান, হিন্দুস্তান কেব্লসের কর্মীদের ১০ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ বার দিল্লি গিয়ে তা মেটানোর জন্য দরবার করবেন তিনি।

Advertisement

১৯৫২ সালে রূপনারায়ণপুরে গড়ে ওঠা এই কারখানায় ফোনের জন্য ‘জেলি ফিল্ড কেব্ল’ তৈরি হত। কিন্তু বাজারে ‘অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল’ চলে আসার পর থেকে ওই কেব্লের চাহিদা কমে। ২০০১ থেকে উৎপাদন প্রায় শূন্য। ২০০৩ সালে কারখানার ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব যায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পুনরুজ্জীবন বোর্ডের (বিআরপিএসই) হাতে। এখন শ্রমিক রয়েছেন ৭৬০ জন।

রূপনারায়ণপুরের কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য মঙ্গলবার জানান, তাঁদের কাছে কারখানা খোলার ব্যাপারে এখনও সরকারি স্তরে খবর আসেনি। তবে কারখানা খোলার ইঙ্গিত মিলতেই খুশির হাওয়া কর্মীদের মধ্যে। এ দিন সকাল-সকাল কারখানায় হাজির হন তাঁরা। গেটের সামনেই শুরু হয়ে যায় আবির খেলা, মিষ্টিমুখ। সামিল হন আশপাশের বাসিন্দা, ব্যবসায়ীরাও। কারখানার কর্মী অমিত পালের কথায়, “কয়েক বছর ধরে যেন দমবন্ধ অবস্থায় আছি। এ বার একটু ভাল করে শ্বাস নেব।” আর এক কর্মী লিলি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুজোর মুখে এমন সুসংবাদ পাব ভাবিনি। সাংসদকে ধন্যবাদ।”

কারখানা রুগ্ণ হয়ে পড়ার প্রভাব পড়েছে এলাকাতেও। রমরমার সময়ে শহরের ডাবর মোড় থেকে চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার ৩ নম্বর গেট পর্যন্ত পুরো এলাকার পরিচর্যা করত হিন্দুস্থান কেব্লস। এখন সেই ঝকঝকে রাস্তাঘাট আর নেই। কর্মী-আবাসন ঝোপঝাড়ে ভর্তি। রাস্তায় আলো জ্বলে না। আগে যে চারটি সুপার মার্কেট সারা দিন গমগম করত, এখন তার প্রায় সব ক’টিই বন্ধ। বেতন পাওয়ার দিনে কারখানার কর্মীরা আগে ট্যাক্সি চড়ে আসানসোলে মাসকাবারি বাজার করতে যেতেন। সে দৃশ্য বহু কাল দেখেননি এলাকাবাসী। তবে কারখানা খুললে আবার এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতির হাল ফিরবে বলে মনে করছেন তাঁরা। বিশ্বনাথ রুজ নামে এক ব্যবসায়ীর কথায়, “কারখানা খুললে এলাকাতেও আগের আনন্দের ছবিগুলো ফিরবে, দেখবেন!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement