প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং একশো দিনের কাজ, এই দুই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে লাগাতার সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে কেন্দ্রেরই সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে ‘বঞ্চনা’র অভিযোগ আরও বেশি করে সামনে আনতে চাইছে তারা। কিন্তু এই সময়েই আবাস যোজনায় তৃণমূলের বঞ্চনার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র।
তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের একটি প্রশ্নের উত্তরে লোকসভায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪-এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১২ লক্ষ ৭৩ হাজার মানুষের জন্য বাড়ি মঞ্জুর হয়েছে। এই সময়ে প্রকল্পে কেন্দ্রের ভাগ হিসাবে রাজ্যের জন্য ৬৮৭.৮৪ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। রাজ্য সরকার সেই অর্থ ও আগের দেওয়া অর্থ এবং রাজ্যের ভাগ থেকে প্রায় ৬,৬১২ কোটি টাকা খরচ করেছে। যদিও রাজ্য এত দিন অভিযোগ করেছে, আবাস যোজনায় অনিয়মের কথা বলে ২০২২-এর নভেম্বরের পরে কেন্দ্র টাকা দেয়নি। আর এই খাতে রাজ্যের বকেয়া রয়েছে ৮,৪১২ কোটি টাকা।
লোকসভার চলতি অধিবেশনে এ দিনই একটি প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৯-২০ থেকে চলতি বছরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের একশো দিনের কাজের ২৪,০৫,৮৫৯টি জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ৪১,৪২,৯৪৫টি, ওড়িশায় ৮২,৪২,৯৪৫টি, মধ্যপ্রদেশে ৩৭,৪৪,১৬০টি এবং এনডিএ শরিক দল শাসিত অন্ধ্রপ্রদেশে ৩৫,৫৪,১৯৩টি কার্ড বাতিল হয়েছে।
কেন্দ্রের এই পরিসংখ্যানকে সামনে রেখেই তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, ওই রাজ্যগুলিতে ভুয়ো জব কার্ড বানিয়ে দুর্নীতি হলেও তাদের টাকা বন্ধ হয়নি। এই সূত্রেই দলের নেতা কুণাল ঘোষের প্রশ্ন, “এই হিসাবই প্রমাণ করছে, রাজ্যের প্রাপ্য আটকানোর একমাত্র কারণ প্রতিহিংসা।” যদিও মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, সংসদে প্রশ্নের উত্তরেই বলা হয়েছে, ভুয়ো জব কার্ডের পাশাপাশি একই নামে একাধিক জব কার্ড তৈরি হলে, কোনও পরিবার কাজ করতে ইচ্ছুক না হলে, ঠাঁই বদল হলে বা পরিবারের একমাত্র জব কার্ডধারীর মৃত্যু হলেও জব কার্ড বাতিল হয়। তৃণমূলের অভিযোগের পাল্টা বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “অন্য রাজ্যের রাজ্য সরকার দুর্নীতি ধরতে কেন্দ্রীয় সরকারকে সহযোগিতা করেছে। সেখানে রাজ্য পদক্ষেপ করে ভুয়ো জব কার্ড বাতিল করেছে। আর আমাদের রাজ্যে রাজ্য সরকারের মদতে ভুয়ো জব কার্ড তৈরি হয়েছে।”
রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে রাজ্যের ৮৩০ কোটি টাকা মঞ্জুর ‘না হওয়া’ নিয়েও সরব হয়েছেন।