বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত প্রসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে ফোরামের প্রতিনিধিরা। কলকাতা প্রেস ক্লাবে। — নিজস্ব চিত্র।
বেআইনি অর্থলগ্নি-কাণ্ডে প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয় সরকারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। ‘চিটফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠকে তথ্য দিয়ে ওই অভিযোগ করেছেন দু’জনে।
বিকাশ শুক্রবার অভিযোগ করেছেন, “আইনি ভাবে লড়াই করে প্রতিটি পর্যায়ে জিতেছি আমরা। কিন্তু প্রশাসন কার্যকর না হলে, আদালতের নির্দেশকে কার্যকর করা যায় না।” তিনি উল্লেখ করেছেন, সারদা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরিষ্কার বলা হয়েছে, তদন্ত করে বার করতে হবে কারা সুবিধাপ্রাপক এবং সরকারের বিভিন্ন দফতরের কোথায় কোথায় ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই তদন্তের কিছু হয়নি। তাঁর অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় সরকার রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য, পশ্চিমবঙ্গের যাঁরা বেআইনি অর্থলগ্নি-কাণ্ডের সুবিধাপ্রাপক, তাঁদের বিব্রত করতে চায় না।”
সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে শ্যামল সেন কমিশন গড়া হলেও পরে রাজ্য তা বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে আদালত বিভিন্ন বেআইনি বেআইনি লগ্নি সংস্থার ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শৈলেন্দ্রপ্রসাদ তালুকদারের নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিটি এবং রোজ়ভ্যালির জন্য প্রাক্তন বিচারপতি দিলীপকুমার শেঠের নেতৃত্বে ‘অ্যাসেট ডিসপোজ়াল কমিটি’ তৈরি করেছে। বিকাশের অভিযোগ, এই ধরনের কমিটির ক্ষেত্রে রাজ্য সহযোগিতা করেনি। পাশাপাশি, এক সদস্যের কমিটি গড়ে টাকা ফেরত দেওয়ার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের সংস্থা ইডি সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। যদিও সুপ্রিম কোর্ট ইডি-র আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। এই সূত্রেই বিকাশের অভিযোগ, “এই দু’টো সরকার চিটফান্ডের প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” তবে এর পরেও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতারিতেরা অল্প করে হলেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিকাশ। অর্থলগ্নি সংস্থায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে লড়াইয়ে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেছেন এ দিনের মঞ্চের প্রতিনিধিরা।
বিকাশের পাশে বসেই সুজনও বলেছেন, “দশ বছর হয়ে গেল, চিটফান্ডের সুবিধাপ্রাপক কে বা কারা, তা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ হল না। আসলে পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা প্রতারক, তাঁরা আজকে যে দলে আছেন, কালকে আবার দলবদল করতে পারেন!” ইডি-র কাছে বাজেয়াপ্ত থাকা টাকা প্রতারিত আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন সুজন। তাঁর বক্তব্য, “আইন অনুযায়ী প্রতারকের জমি নিলাম হওয়ার পরে প্রতারিতেরা পেতে পারতেন। রাজ্য সেটা করতে পারত। তাতে শিল্পায়নের জন্য রাজ্যের জমি-সমস্যা মিটত। কিন্তু সেটা হল না। বোঝা গেল রাজ্য শিল্প করতে চায় না। চায় না প্রতারিতদের টাকা ফেরত দিতেও।”
যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “ওঁরা বাজারে নতুন তত্ত্ব আনলেন। মনে হয় না, ওঁদের কোনও বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা আছে। এটা ঠিক যে, প্রতারিত মানুষের টাকা ফেরত পাওয়ার অধিকার রয়েছে। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে তারা সেই কাজ করবে।” তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, “এটা পুরোটাই কেন্দ্রীয় সংস্থার বিষয়। রাজ্যের হাতে কিছু নেই। শ্যামল সেন কমিশনের মেয়াদ কবেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পরে সিবিআই-এর হাতে মামলা চলে যায়। আর সিপিএমপন্থীরা এ সব বলার আগে তাঁদের দলীয় মুখপত্রে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার যে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, সেই টাকা স্বেচ্ছায় ইডির কাছে জমা দিন!”
এই আবহে সংসদে তাঁদের কণ্ঠস্বর তোলার জন্য ‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে’ তাঁদের পাশে থাকার জন্য দমদম কেন্দ্রে সুজন এবং হাওড়া কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তথা আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়কে সমর্থন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে আমানতকারীদের সংগঠন। সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন আইনজীবী শুভাশিস চক্রবর্তী, প্রতারিতদের সংগঠনের তরফে কিঞ্জল ভট্টাচার্য-সহ অন্যেরা।