প্রতীকী ছবি।
বিমান সারানো, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কলকাতাকে ব্যবহার করতে চায় কেন্দ্র। সম্প্রতি যে ৮টি বিমানবন্দরকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে দিল্লি, চেন্নাইয়ের সঙ্গে রয়েছে কলকাতাও।
বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মেনটিন্যান্স-রিপিয়ারিং-ওভারহলিং (এমআরও) কেন্দ্র রয়েছে বিশ্ব জুড়ে। ভারতে এই মুহূর্তে চারটে এমআরও রয়েছে হায়দরাবাদে, তামিলনাড়ু, কোচি এবং নাগপুরে। সংখ্যাটা বাড়াতে চায় কেন্দ্র। কারণ, দেশের আকাশে এখন যত বিমান উড়ছে, তাদের সকলের রক্ষণাবেক্ষণ দেশের এই চারটি কেন্দ্রের পক্ষে করা সম্ভব নয়। ফলে, বহু বিমানকেই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদেশে উড়ে যেতে হয়।
বিমান মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, দেশে যত বেশি এমআরও তৈরি হবে, ততই দেশের মাটিতে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হবে। এতে প্রধানত দু’টি লাভ। এক, এই ধরণের রক্ষণাবেক্ষণ বা সারাইয়ের জন্য বিদেশ যেতে হবে না। তাতে উড়ান সংস্থাগুলির খরচ কমবে। দুই, দেশের মাটিতে এমআরও-র সঙ্গে সহয়োগী সংস্থার ব্যবসা বাড়বে। বিদেশে গিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করাতে গেলে বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়। দেশে সেই রক্ষণাবেক্ষণ হলে সেই বিদেশি মুদ্রা বেঁচে যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এমআরও-বিশেষজ্ঞ শুভব্রত রায় বলেন, “কলকাতার জন্য সুখবর। কারণ, এখানে এমআরও হলে বিমানের আনাগোনা বাড়বে। আশপাশের ছোট দেশ থেকেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিমান আসবে কলকাতায়। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরিখে কলকাতার ভৌগলিক অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ।” বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই ধরণের কেন্দ্র গড়ে উঠলে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে। শুভব্রতর কথায়, “এমআরও-র ক্ষেত্রে বিমানের যন্ত্রাংশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে এমআরও তৈরি হয়, তাকে ঘিরে বিমানের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিষের চাহিদা বাড়ে। ফলে ওই এলাকার ব্যবসা বাড়ে।”
সূত্রের খবর, এমআরও করতে গেলে বেশ খানিকটা জমির প্রয়োজন। এ রাজ্যের তৃণমূল সরকার জমি অধিগ্রহনে নারাজ। বিমান মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, কলকাতা বিমানবন্দরের ভিতরে যতটা জমি রয়েছে, তাতে এমআরও করতে অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন হবে না। বেশ কয়েকটি হ্যাঙ্গার (বিমানের গ্যারেজ, যেখানে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়) রয়েছে। এমআরও হলে আরও কয়েকটি হ্যাঙ্গার তৈরির প্রয়োজন।
কলকাতায় ইতিমধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়া তাদের এয়ারবাস ৩১৯ বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বেস বানিয়েছে। ফলে, কলকাতায় এখন নিয়মিত ওই নির্দিষ্ট বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও সারাইয়ের কাজ চলে। তবে, পুরোদস্তুর এমআরও তৈরি হলে, সমস্ত ধরনের বিমানই আসবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। চাহিদা বাড়বে ইঞ্জিনিয়ারদেরও।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে বিমানের যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। তার জন্য আমদানি শুল্ক কমানোর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কেন্দ্র। তবে, ভারতের মাটিতে এমআরও তৈরি হলে, এ দেশেই সেই সব যন্ত্রাংশ তৈরি হবে এবং পরবর্তীকালে সেই যন্তারংশ বিদেশেও রফতানি করা যাবে।