পঞ্চায়েতের প্রকল্পে বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণে ছাড়পত্র দিতে দেরি কেন্দ্রের

কেন্দ্র এখনও প্রস্তাবের ছাড়পত্র দেয়নি। ফলে, রাজ্যে ৩২২৫টি পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণ কবে মিলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নন দফতরের কর্তারা। যে প্রকল্পে রাজ্য ওই ঋণ চায়, তা হল— ‘পঞ্চায়েতের প্রাতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ কর্মসূচি’ বা আইএসজিপি। সেই টাকায় পঞ্চায়েতে রাস্তাঘাট নির্মাণ-সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ ছাড়াও সদস্য, পদাধিকারী এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

কেন্দ্র এখনও প্রস্তাবের ছাড়পত্র দেয়নি। ফলে, রাজ্যে ৩২২৫টি পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণ কবে মিলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নন দফতরের কর্তারা।

Advertisement

যে প্রকল্পে রাজ্য ওই ঋণ চায়, তা হল— ‘পঞ্চায়েতের প্রাতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ কর্মসূচি’ বা আইএসজিপি। সেই টাকায় পঞ্চায়েতে রাস্তাঘাট নির্মাণ-সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ ছাড়াও সদস্য, পদাধিকারী এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১০ সাল থেকে রাজ্যে প্রকল্পটি চালু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এক হাজার পঞ্চায়েতের জন্য মোট ১০০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। এ বার দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩২২৫টি পঞ্চায়েতের জন্য ১৮০০ কোটি টাকা ঋণ পেতে চায় রাজ্য। কিন্তু সেই প্রস্তাবেই কেন্দ্র এখনও ছাড়পত্র দেয়নি।

রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের একটি সূত্রের দাবি, প্রথম পর্যায়ের কাজের সাফল্য দেখে বিশ্বব্যাঙ্ক নিজে থেকেই দ্বিতীয় পর্যায়ের ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়। তার ভিত্তিতেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করা হয়। এই প্রকল্পে রাজ্য সরকার সরাসরি বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে ঋণ চেয়ে আবেদন করতে পারে না। রাজ্য সরকারের হয়ে এই আবেদন বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে পাঠানোর কথা কেন্দ্র সরকারের। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এবং অর্থ মন্ত্রক পৃথক ভাবে রাজ্য সরকারের ঋণের প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখে ছাড়পত্র দেয়। তার পরে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সেটি পাঠায় বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে।

Advertisement

রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক আমাদের প্রস্তাবের কিছু বিষয় পরিষ্কার করে নেওয়ার জন্য জানতে চেয়েছিল। তাদের তা জানানো হয়েছে। বিভ্রান্তি দূর করা হয়েছে। ওই মন্ত্রক ফাইল ছেড়ে দিয়েছে। তাদের তরফ থেকে আর কোনও সমস্যা নেই বলে শুনেছি। ফাইলটি আটকে রয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকে। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তারা কেন ছাড়পত্র দিচ্ছে না, তা আমাদের জানা নেই।’’

ওই দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, যেহেতু এটি ঋণ এবং দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে পরিশোধ করতে হয়, সেই কারণে রাজ্য অর্থ দফতরের অনুমোদন নিয়ে বছর খানেক আগে এই দফার আবোদনপত্র পাঠানো হয় কেন্দ্রের কাছে। সাধারণত দু’তিন মাসের মধ্যেই ওই ছাড়পত্র কেন্দ্র দিয়ে দেয়। কিন্তু এ বার এখনও তা মেলেনি। ওই আধিকারিকের দাবি, ‘‘প্রায় দেড় মাস আগে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক থেকে ঋণ সংক্রান্ত প্রস্তাবটির উপরে কয়েকটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছিল। সব কয়েকটির উত্তর দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে আইএসজিপি প্রকল্পে যে ১০০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর মাসে। ২০১০ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কিস্তিতে রাজ্যের ৯টি জেলার বাছাই করা এক হাজার পঞ্চায়েতকে এই টাকা দেওয়া হয়। শেষ কিস্তির টাকা গত মার্চ মাসের আগেই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত খরচও করে ফেলেছে। ফলে, ওই সব পঞ্চায়েতে বিশ্বব্যাঙ্কের তহবিল আপাতত শূন্য।

দ্বিতীয় পর্যায়ে অবশ্য প্রথম পর্যায়ের মতো এত বেশি টাকা ঋণ চাওয়া হয়নি। প্রথম পর্যায়ে যে সব পঞ্চায়েতকে টাকা দেওয়া হয়েছে, এই পর্যায়ের জন্যও তাদের নাম বিবেচনা করা হয়েছে। ওই দফতরের এক কর্তা জানান, চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক পঞ্চায়েতগুলিতে অনেক বেশি টাকা আসবে। তার সঙ্গে যদি আইএসজিপি-র টাকা যোগ হয়, তা হলে উন্নয়নের কাজে কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু কেন্দ্র সরকারের ছাড়পত্র মেলার পরে বিশ্বব্যাঙ্কের সেই ঋণ কবে আসবে সেই এখন রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক শ্রেণির কর্তার কাছে লাখ টাকার প্রশ্ন।

যে সমস্ত পঞ্চায়েতে ইতিমধ্যেই ওই প্রকল্পে কাজ হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বাগনান-১ ব্লকের খালোড় বা উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের চণ্ডীপুরও। গত বছর চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতে ওই প্রকল্পে যে ধরনের কাজ হয়েছে, তা পরিদর্শন করতে আসেন বিশ্বব্যাঙ্কের তরফে এ দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারা। তাঁরা এই পঞ্চায়েতের রাস্তা, কমিউনিটি হল এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে সমস্ত কাজকর্ম যে ভাবে করা হয়, তা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ওই সময়েই বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তারা রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দেন, কর্নাটক এবং বিহারেও এই প্রকল্পে কাজ হয়েছে। তবে, পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পে কাজের মান ওই দুই রাজ্যের চেয়ে ভাল। এই অবস্থায় রাজ্য চাইলে দ্বিতীয় পর্যায়ে এই প্রকল্পে ঋণের আবেদন করা হলে বিশ্বব্যাঙ্ক বিবেচনা করতে পারে বলেও তাঁরা সেই সময়ে জানিয়ে দেন।

তাই সেই কাজের মান ধরে রাখার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ঋণের জন্য আবেদন করেছে রাজ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement