মারাত্মক অভিযোগ কেন্দ্রের। — ফাইল চিত্র।
দুর্নীতি সংক্রান্ত নানা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে রাজ্যে। প্রতি দিনই নতুন নতুন অভিযোগ উঠছে। এ বার তেমনই এক মারাত্মক অভিযোগ তুলল কেন্দ্রীয় সরকার। সংবাদ সংস্থা পিটিআই দাবি করেছে, মাত্র ছ’মাসে কেন্দ্রীয় প্রকল্প মিড-ডে মিলের ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে রাজ্যে। যদিও তৃণমূল এই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি ও কেন্দ্রের উদ্দেশে।
এমনই এক রিপোর্ট পেশ করেছে মিড-ডে মিল নিয়ে তদন্তের জন্য রাজ্য ঘুরে যাওয়া কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের দল। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, রাজ্য সরকার ১৬ কোটি মিড-ডে মিলের ভুয়ো হিসাব পেশ করেছে। এর ফলে, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ের হিসাবে রাজ্য হিসাব চাইলে ১৬ কোটি অতিরিক্ত মিড-ডে মিল দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম খাবার পড়ুয়াদের সরবরাহ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, এই রাজ্যে মিড-ডে মিল প্রকল্পেও দুর্নীতি হচ্ছে বলে আগে থেকেই সরব হয়েছিল রাজ্য বিজেপি। বগটুইকাণ্ড-সহ বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের পরিবর্তে মিড-ডে মিলের টাকা খরচ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। প্রধানমন্ত্রী পোষণ প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে সম্প্রতি একটি প্যানেল তৈরি করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে শিক্ষা মন্ত্রকের জয়েন্ট রিভিউ প্যানেল একটি রিপোর্ট তৈরি করে। সম্প্রতি সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তাতেই এমন চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২২ সালের প্রথম দুই অর্থবর্ষে রাজ্যের তরফে ১৪০ কোটি ২৫ লক্ষ মিড-ডে মিলের রিপোর্ট পেশ করা হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের রিপোর্টে ১২৪ কোটি ২২ লক্ষ মিড-ডে মিলের উল্লেখ রয়েছে। এই ফারাকের মধ্যেই দুর্নীতি রয়েছে বলে দাবি।
বিষয়টি সামনে আসতেই আসরে নেমেছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইট করে লেখেন, ‘‘আগেই বলেছিলাম! শিক্ষা মন্ত্রকের জয়েন্ট রিভিউ রিপোর্টে ১৬ কোটি মিড-ডে মিল বাবদ ১০০ কোটির দুর্নীতির অভিযোগ। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, ছয় মাসে দুর্নীতি হয়েছে।’’ এটিকে রাজ্য সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি বলে উল্লেখ করে শুভেন্দু জানিয়েছেন, এমন দুর্নীতির কথা জানিয়ে তিনি আগেই কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে চিঠি দিয়েছিলেন। একই ভাবে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ দলের অন্যান্য নেতা।
চুপ নেই তৃণমূলও। দলের সাংসদ শান্তনু সেন শুভেন্দুকে কটাক্ষ করার পাশাপাশি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তোলেন। শান্তনু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘যাঁকে প্রকাশ্য টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, যাঁর নাম সিবিআই-এর কাছে আছে, সারদায় সুদীপ্ত সেন জানালেন কত টাকা নিয়েছেন ধমকে চমকে, তিনি বড় বড় কথা বলছেন।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে চুরমার। এই ধরনের প্রকল্পগুলি কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ে চলে। দুই পক্ষের যোগদান থাকে। এই জয়েন্ট রিভিউ মিশনে রাজ্য-কেন্দ্র দুই পক্ষের প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু রাজ্যকে না জানিয়ে একতরফা ভাবে এই প্রকল্প করা হয়েছে। রাজ্যের প্রতিনিধির সই নেই রিপোর্টে। এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। বাংলার প্রতি প্রতিহিংসার আচরণ কতটা মারাত্মক, আরও এক বার তা প্রকাশিত হল এই রিপোর্টের মাধ্যমে।’’ প্রসঙ্গত, আগেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জয়েন্ট রিভিউ মিশনের রিপোর্টে রাজ্যের প্রতিনিধির স্বাক্ষর না নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। এ নিয়ে তিনি দিল্লিকে চিঠি পাঠিয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন।