লড়াই এ বার বীর-দর্শন নিয়েও।
দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে কীর্তি-প্রাচীর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ১৫০ বর্গফুটের সেই দেওয়ালে টাঙানো হবে দেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান পরমবীরচক্র প্রাপকদের ছবি। কেন্দ্র চায়, প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং বাণীও স্থান পাক ওই কীর্তি প্রাচীরে।
উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই পরিকল্পনার কথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিকে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ ভামরে। রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে যাতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি। সেই সূত্রে মঙ্গলবার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধী, সে কথা রাজ্যপালকে জানিয়ে এসেছেন পার্থবাবু।
রাজ্য সরকারের বক্তব্য, পরমবীরচক্র প্রাপ্তদের বীরত্ব নিয়ে কোনও সংশয় থাকতে পারে না। যুদ্ধক্ষেত্রে অসম সাহসিকতার জন্য এখনও পর্যন্ত ২১ জন সেনাকে পরমবীরচক্র সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনই মরণোত্তর সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু নবান্নের মতে, যে রাজ্যে সুভাষচন্দ্র, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামী আছেন, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মতো চিন্তাবিদ রয়েছেন, সেখানে শুধু বীর সেনানীদের ছবি টাঙানো হবে কেন? তা ছাড়া মোদীর ছবি টাঙানোর ব্যাপারেও রাজ্যের তীব্র আপত্তি।
পার্থবাবু রাজ্যপালকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোদীর ছবি তারা টাঙাবেন না। আর কীর্তি-প্রাচীরে কাদের ঠাঁই হবে, তা মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবেন। তত দিন এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে না।
কেন্দ্র যে ভাবে এই পরিকল্পনা চাপিয়ে দিতে চাইছে, তা নিয়েও আপত্তি রয়েছে রাজ্যের। উচ্চশিক্ষা দফতরের বক্তব্য, এটি কোনও সরকারি প্রকল্প নয়। বিজেপি নেতা তরুণ বিজয় ‘বিদ্যা বীরতা অভিযান’ নামে একটি প্রচার শুরু করেছেন। সেই প্রচারের অঙ্গ হিসাবে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কীর্তি-প্রাচীর নির্মাণ করতে বলেছে। এখন প্রশ্ন হল, একটি রাজনৈতিক দলের নেতার এনজিও-র প্রচারে রাজ্য কেন সামিল হবে?
প্রস্তাব: এমনই কীর্তি-প্রাচীর চায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। নিজস্ব চিত্র।
উচ্চ শিক্ষাকর্তাদের আরও প্রশ্ন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কেন শিক্ষার বিষয়ে নাক গলাবে? কেনই বা রাজ্যপালের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের জন্য চাপ দেওয়া হবে? তাঁদের মতে, এ ব্যাপারে রাজ্যপালের কোনও ভূমিকা থাকতেই পারে না। কীর্তি-প্রাচীর তৈরি করতে সরকারি টাকা খরচ হবে। সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার একমাত্র রাজ্য সরকারের। রাজ্যপাল তা চাপিয়ে দিতে পারেন না। ওই কর্তাদের বক্তব্য, রাজ্য নিজের মতো করে প্রকল্পটি চালু করবে বলে রাজভবনে জানিয়েছেন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী।
আরও পড়ুন:সত্যবান ডাক্তার সত্য বলছেন কি
রাজভবনের একটি সূত্র অবশ্য দাবি করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে রাজ্যপালকে চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেনিয়ম কিছু করেননি। সেই সূত্রেই রাজ্যপাল উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ বার রাজ্য কী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। রাজ্য সরকারি ভাবে মতামত জানালে রাজ্যপাল তা দিল্লিতে জানিয়ে দেবেন। তবে কেশরী মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পরমবীরচক্র প্রাপকদের ছবি রাখলে ভালই হবে।