আরজি কর-কাণ্ডে তিন পাতার ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ দিল সিবিআই। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ এবং হত্যা মামলায় শিয়ালদহ আদালতে শুক্রবার তিন পাতার ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জমা দিল সিবিআই। তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে খবর, তাঁদের নজরে রয়েছে তিন জনের ফোনের ‘কল ডিটেলস’। আরও বেশ কয়েক জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। সে সবই রিপোর্টে জানানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন, সিবিআই যে নতুন করে তদন্ত করছে, তার প্রমাণ শুক্রবার আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা আরও দ্রুত তদন্তের ফল জানতে চান। যদিও বিচারক তাঁদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন।
আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তে নেমে সিবিআই হাসপাতালের কিছু অংশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে। বেশ কয়েক জনকে আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ বার নতুন করে আরও কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রিপোর্টে সিবিআই তেমনটাই দাবি করেছে বলে সূত্রের খবর। ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, রিপোর্টে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এখন নতুন ২৪ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। হাসপাতালের আরও কিছু জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন করে তিন জনের কল ডিটেলস দেখা হচ্ছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত সেখানকার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে নতুন তথ্যপ্রমাণ পেলে তা আদালতে জানানো হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছে সিবিআই। নির্যাতিততার পরিবারের আইনজীবী সওয়ালে জানান, তদন্তের নামে দীর্ঘসূত্রিতা চলবে না। ধৃত সন্দীপ এবং অভিজিৎকে আদালতে হাজির হওয়ার কথা বলা হলেও তাঁরা হাজির হচ্ছেন না। নির্যাতিতার বাবা জানান, তাঁরা অপেক্ষা করে রয়েছেন। আট মাস ধরে যেটা হবে হবে করা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে না। তিনি আরও জানিয়েছেন, আদালতের ভরসাতেই রয়েছেন তাঁরা। এর পরেই বিচারক তাঁদের ধৈর্য ধরতে বলেন। বিচারক নির্যাতিতার বাবাকে বলেন, ‘‘নিজেকে ব্রাত্য ভাববেন না।’’
আগামী ২৮ এপ্রিল সিবিআইকে পরবর্তী ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তার আগে আগামী ১৬ এপ্রিল সন্দীপ এবং অভিজিৎকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরজি কর-কাণ্ডে প্রমাণ লোপাটের মামলায় দু’জনকেই গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই সময়মতো চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। ওই মামলায় দু’জনেই জামিন পেয়েছেন। অভিজিতের জেলমুক্তি ঘটেছে। কিন্তু আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে সন্দীপ এখনও জেলে। তাঁদের দু’জনকে আরজি করের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় ১৬ এপ্রিল আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার আদালতের বাইরে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘সিবিআই যে নতুন করে কাজকর্ম শুরু করেছে, তার প্রমাণ কোর্টে জমা দিয়েছে শুক্রবার। আমরা বলেছি, তদন্ত করছেন ঠিক আছে, ফলাফল খুব তাড়াতাড়ি চাই।’’
আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রথম থেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল নির্যাতিতার পরিবার। এই মামলায় প্রথম যে চার্জশিট সিবিআই দেয়, তাতে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয় রায়কেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই চার্জশিট অনুযায়ী বিচারপ্রক্রিয়া এগোয় এবং কলকাতা পুলিশের ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাঁকে আজীবন কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়। নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, এই ঘটনায় একা সঞ্জয় জড়িত নন। তারা প্রশ্ন তোলে যে, বাকি অভিযুক্তদের কী হবে? নির্যাতিতার পরিবার আদালতে জানিয়েছিল, সিবিআইয়ের তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তারা জানতে পারছে না। তার ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি মাসে তদন্তের অগ্রগতির প্রথম রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। শুক্রবার তিন পাতার ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জমা দিয়েছে তারা।