সিবিআই দফতরে হাজিরা শওকতের। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
নিজ়াম প্যালেসে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরে তিনি ঢুকলেন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ছাড়া পেলেন। কয়লা পাচারের মামলায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লাকে বুধবার এ ভাবেই ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই।
শওকত ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তদন্তকারীদের দাবি, কয়লা পাচারে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই ব্যবসায়ীর বয়ানের ভিত্তিতে শওকতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই মামলাতেই বৃহস্পতিবার শওকতের আপ্ত-সহায়ক সাদেক লস্করকে ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই। এ দিন সিবিআই দফতর থেকে বেরোনোর সময় শওকত বলেন, “মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কালিমালিপ্ত করার জন্যই এ-সব করা হচ্ছে। তদন্তে সহযোগিতা করব।’’
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের পর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার শতাধিক ইটভাটায় অবৈধ ভাবে খনি থেকে তোলা কয়েক কোটি টাকার কয়লা (যার স্থানীয় নাম ‘ডিস্কো’) পাচার করা হয়েছিল। ওই কয়লা পাচারের সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শাসক দলের কিছু নেতা জড়িত বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ।
শওকত শাসক দলের জেলা ও রাজ্য সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা। তদন্তকারীদের দাবি, কয়লা পাচারের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল শওকতের। এ দিন তাঁর আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ব্যাঙ্ক আমানতের নথি, প্যান কার্ড, নিজস্ব বাণিজ্যিক সংস্থার বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০০০ সালে তৎকালীন সিপিএম নেতা শওকত মাছের ভেড়ির ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তার বছর তিনেক পর থেকে তাঁর পারিবারিক সদস্যদের নামে জমি-বাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তি কেনা শুরু হয়। তাঁর ব্যবসাও ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে। গত চার বছরে বিধায়কের একতলার ছোট বাড়ি এখন তেতলা প্রাসাদ। তা ছাড়া গত কয়েক বছরে সোনারপুর ও টালিগঞ্জের রানিকুঠি এলাকায় তাঁর পারিবারিক সদস্যদের নামে জমি ও বাড়ি কেনা হয়েছে।
তদন্তের স্বার্থে ওই সব সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক বিনিয়োগের সঙ্গে শওকতের আয়ের সামঞ্জস্য রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। প্যান কার্ডের সূত্র ধরে আয়কর দফতরে ওই বিধায়কের জমা দেওয়া গত ১০ বছরের নথি যাচাই করা হচ্ছে।
এ দিন লালা-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন কয়লা ব্যবসায়ীর সঙ্গে শওকতের যোগাযোগ ও সম্পত্তির বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। আরও নথি চাওয়া হয়েছে। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘অধিকাংশ প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায়নি। প্রয়োজনে তাঁকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে হবে বলে জানানো হয়েছে।’’
কয়লা পাচারের মামলায় ইতিমধ্যেই দু’দফায় অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অভিষেক-পত্নী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ওই মামলায় দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। মঙ্গলবারেই ভবানীপুরে রুজিরার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।