(বাঁ দিকে) সন্দীপ ঘোষ। বিপ্লব সিংহ (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত ব্যবসায়ী বিপ্লব সিংহের জামিনের বিরোধিতা করল সিবিআই। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা এই মামলায় অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত বিপ্লব। এই মামলার শুনানিতে সোমবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করল, তদন্তে তারা ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’-এর আঁচ পেয়েছে। তদন্তের এই পর্যায়ে বিপ্লব জামিন পেলে সমস্যা হতে পারে বলেই তাদের মত।
সোমবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি মামলার শুনানি ছিল। সন্দীপ-সহ এই মামলার পাঁচ অভিযুক্তকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানিতে হাজির করানো হয়। সেখানে জামিনের আবেদন করেন বিপ্লব। সেই আবেদনের বিরোধিতা করেছে সিবিআই। তাদের দাবি, এই মামলার তদন্তে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’-এর আঁচ মিলেছে। চার্জশিটে সে কথা উল্লেখও করা হয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই আর্থিক দুর্নীতিকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। তদন্তের এই পর্যায়ে বিপ্লবকে জামিন দিলে তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সিবিআইয়ের আরও দাবি, টেন্ডার কারচুপিতেও অভিযুক্তদের ভূমিকা রয়েছে।
গত ২৯ নভেম্বর আরজি করে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা করেছে সিবিআই। সেই তালিকায় রয়েছেন বিপ্লব, আরজি করের প্রাক্তন হাউস স্টাফ আশিসকুমার পাণ্ডে, ব্যবসায়ী সুমন হাজরা, সন্দীপের রক্ষী আফসর আলি খান। সন্দীপ-সহ পাঁচ জন অভিযুক্ত এবং কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে ৮০ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। আইনজীবীদের একাংশের ব্যাখ্যা, সন্দীপ যে হেতু সরকারি আধিকারিক, তাই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার জন্য আইনত রাজ্য সরকারের সম্মতির প্রয়োজন। চার্জশিটের ক্ষেত্রে ওই সম্মতি না থাকলে বিচারক চার্জশিট গ্রহণ না-ও করতে পারেন। চার্জশিট আদালত গ্রহণ না করলে মামলার চার্জগঠন ও বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে দেরি হতে পারে বলে আইনজীবীদের একাংশের মতামত। এখনও পর্যন্ত সেই চার্জশিটে সম্মতি দেয়নি রাজ্য। আদালতও তা গ্রহণ করেনি। সেই আবহেই এ বার বিপ্লবের জামিনের বিরোধিতা করল সিবিআই।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করত বিপ্লবের ‘মা তারা ট্রেডার্স’। অভিযোগ, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না-করেই বরাত পেতেন ওই ব্যবসায়ী। তদন্তকারী আধিকারিকদের সন্দেহ, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার কারণেই বরাত পেয়ে যেতেন বিপ্লব। আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলিও সেই অভিযোগই করেছিলেন। আরজি করে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এনেছিলেন এই আখতারই। তিনিই ইডি ও সিবিআইকে দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করানোর আর্জি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সরকারের টাকার অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। সরবরাহকারীদের কাজের বরাত দেওয়ার বিষয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগও তুলেছিলেন আখতার। এ ক্ষেত্রে বিপ্লব, সুমনের নামও উল্লেখ করেছিলেন আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার।