প্রায় ৬৫ ঘণ্টা তল্লাশি চালানোর পর, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকারকে না জানিয়েই সিবিআই গ্রেফতার করল বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও। শুধু তা-ই নয়, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর নারদাকাণ্ডে ১৭ মে কলকাতার মেয়র তথা কলকাতা বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র, প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং বেহালা পূর্বের প্রাক্তন বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। সে ক্ষেত্রেও বিধানসভার স্পিকার এবং সচিবালয়কে অন্ধকারে রেখেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। পর পর এমন ঘটনা ঘটায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভাকে না জানিয়ে কী ভাবে বিধানসভার সদস্যদের গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, বারবার এমন ঘটনা ঘটায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আধিকারিকদের বিধানসভায় তাঁর সামনে হাজিরার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে বিধানসভার সচিবালয়ের সঙ্গে দুই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার চিঠি চালাচালি হওয়ার পর সংঘাত থেমে গিয়েছিল। কিন্তু স্পিকারের সামনে হাজিরা দেননি সিবিআই বা ইডির কোনও আধিকারিক। যদিও আইন বলছে, যে কোনও লোকসভা বা রাজ্যসভার সাংসদ কিংবা বিধানসভার সদস্যকে গ্রেফতার করতে গেলে রাজ্য পুলিশ বা কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থাকে বিধানসভার অনুমতি নিতে হয় না। কিন্তু লোকসভার স্পিকার, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এবং বিধানসভার স্পিকারকে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির গ্রেফতারের ব্যাপারে অবগত করানো সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তাই কোনও সংসদ বা বিধায়ক গ্রেফতার হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট সচিবালয়কে জানানো বাধ্যতামূলক।
প্রায় ৬৫ ঘণ্টা তল্লাশি চালানোর পর নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। সোমবার ভোর সওয়া ৫টা নাগাদ গ্রেফতার করা হয়েছে তৃণমূল বিধায়ককে। স্পিকার বিমান বলেন, “এখনও আমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছুই জানায়নি সিবিআই। তবে আশা করি সময়ের মধ্যেই আমার রিসিভিং দফতরে ওরা জানিয়ে দেবে।” আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্পিকারকে বিধায়কের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে খবর সিবিআই সূত্রেও। পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিককে জেরা করার সময় গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু জীবনকৃষ্ণের মতোই বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ গ্রেফতার হয়েছিলেন গভীর রাতে। দুটি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাকে অবগত করেনি সিবিআই, এমনটাই অভিযোগ।