—প্রতীকী ছবি।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গাজ়িয়াবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ড ডিস্কের তথ্য যে অবিকৃত এবং আসল, তা হলফনামা দিয়ে দাবি করল সিবিআই।
সোমবার ওই মামলায় বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআইয়ের হলফনামা জমা দেন কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য। সূত্রের খবর, ওই হার্ড ডিস্কে কী তথ্য আছে এবং সেই তথ্য যে আসল, তা কী ভাবে বোঝা গিয়েছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা হলফনামায় দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে উত্তরপত্র স্ক্যান করার পরে সেই তথ্য বিকৃত করে বিশেষ কিছু পরীক্ষার্থীর নম্বর বাড়ানো হয়েছে তারও ব্যাখ্যা রয়েছে সেখানে।
সূত্রের খবর, উত্তরপত্র স্ক্যান এবং সফল পরীক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির দায়িত্বে থাকা সংস্থা ‘নাইসা’-র একাধিক কর্মী কী ভাবে এই দুর্নীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন, সেই ব্যাখ্যা যেমন ওই রিপোর্টে দেওয়া হয়েছে, তেমনই উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই রকম দুর্নীতির ইঙ্গিত ওই হলফনামায় আছে।
প্রসঙ্গত, এ দিনই বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম একটি অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিয়েছেন। তাতে দাবি করা হয়েছে, ২০১৮ সালে এসএসসি কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীকে উত্তরপত্রের (ওএমআর শিট) প্রতিলিপি দিয়েছিল। যা থেকে ফিরদৌসের দাবি, এসএসসি-র কাছেও যে উত্তরপত্রের তথ্য ছিল তা প্রমাণ হয়।
এ দিন শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, সিবিআই উত্তরপত্র সংক্রান্ত যে তথ্য পেয়েছে তা পরীক্ষার্থীরা দেখতে পাবেন। তার জন্য আজ বিকেল ৪টের মধ্যে সিবিআইয়ের কাছে আবেদন করতে হবে। মামলায় সিবিআই ও এসএসসি যে তথ্য দিয়েছে তাও দেখা যেতে পারে। তার জন্য হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আবেদন করতে হবে। মামলার সঙ্গে যুক্ত নন, এমন কোনও ব্যক্তিও আদালতে তথ্য জমা দিতে পারেন। পরবর্তী শুনানি ১৯ ফেব্রুয়ারি।
সিবিআই সূত্রের খবর, নাইসা উত্তরপত্র স্ক্যান করে পরীক্ষার ফলাফলের তালিকা তৈরির বরাত পেলেও তারা স্ক্যান করার দায়িত্ব অন্য সংস্থাকে দিয়েছিল। তারা কলকাতায় এসে কমিশন এবং নাইসার আধিকারিকদের সামনেই স্ক্যান করে। সেই তথ্য নাইসাকে দেওয়া হয়। পরবর্তী কালে সেই তথ্য বিকৃত করা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, কোন কোন পরীক্ষার্থীর লিখিত এবং টাইপিং পরীক্ষার নম্বর বাড়াতে হবে তার তালিকা নীলাদ্রি দাস-সহ নাইসার আধিকারিকদের কাছে গিয়েছিল। পরে নীলাদ্রি পৃথক একটি সংস্থা খুলে পঙ্কজ বনশল-সহ নাইসার কিছু কর্মীকে সেই সংস্থায় নিযুক্ত করেন। অভিযোগ, নাইসা-র সার্ভার থেকে তাঁরা যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিলেন এবং পরীক্ষার্থীরা কমিশনের কাছে আরটিআই করলে নীলাদ্রিরা সেই তথ্য সরবরাহ করতেন বলে খবর।
প্রসঙ্গত, পঙ্কজের বাড়ি থেকে তিনটি হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করেছিলেন গোয়েন্দারা এবং সেই হার্ড ডিস্ক অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে বলে খবর। তদন্তকারীদের দাবি, তাতেই আসল তথ্য ধরা পড়ে এবং দেখা যায় এসএসসি-র সার্ভারের সঙ্গে ওই তথ্যের মিল নেই।
ডিভিশন বেঞ্চে মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে অসন্তুষ্ট, বিতর্কিত ভাবে নিযুক্ত শিক্ষকদের অন্যতম আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে ভাবে মামলার বিচার করতেন এই ডিভিশন বেঞ্চও সেই পথে হাঁটছে। সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই শিক্ষকদের আর এক আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র। এ দিন উত্তরপত্র যাচাইয়ের নির্দেশ নিয়েও আপত্তি তোলেন তিনি। ওই প্রবীণ আইনজীবীর ‘আশঙ্কা’, ‘‘এই নির্দেশের ফলে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে। কারণ, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের উত্তরপত্র আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি।’’ যদিও ডিভিশন বেঞ্চ সেই যুক্তি মানেনি।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির সব মামলা (শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী) সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয় যে হাই কোর্টের একটি বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলা শুনবে এবং ছ’মাসের মধ্যে শুনানি শেষ করে রায় দেবে। সেই নির্দেশ মতোই বিচারপতি বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি পাঠান কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি।