ফের গরু পাচারের আতঙ্ক আংরাইলে

বাসিন্দারা জানান, গরু পাচারের পাশাপাশি,  ‘ধুর’ পাচার  (দু’দেশের মধ্যে বেআইনি ভাবে পারাপার), বাইক পাচার, কাফ-সিরাফ, সার পাচার-সহ বহু ধরনের বেআইনি কাজ এই সীমান্ত দিয়ে চলত। 

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গাইঘাটা: শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০২:৪১
Share:

বাংলাদেশি গরু পাচারকারীদের ছোড়া বোমায় বিএসএফ জওয়ানের হাত উড়ে যাওয়ার ঘটনার পর আতঙ্কে রয়েছেন আংরাইল সীমান্তের মানুষ। ফিরে এসেছে আতঙ্কের স্মৃতি।

Advertisement

এক সময় ছিল যখন ভারত-বাংলাদেশের আংরাইল সীমান্ত ছিল গরু পাচারের স্বর্গরাজ্য। এলাকার বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি ফের গরু পাচার শুরু হয়েছে। তারপরই জওয়ানের উপর হামলা। সব মিলিয়ে তাঁরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

আংরাইল সীমান্ত এলাকায় কোনও কাঁটাতার নেই। দু’দেশের সীমান্ত আলাদা করেছে ইছামতী নদী। বাসিন্দারা জানান, গরু পাচারের পাশাপাশি, ‘ধুর’ পাচার (দু’দেশের মধ্যে বেআইনি ভাবে পারাপার), বাইক পাচার, কাফ-সিরাফ, সার পাচার-সহ বহু ধরনের বেআইনি কাজ এই সীমান্ত দিয়ে চলত।

Advertisement

এক সময় গরু পাচারের করিডর হয়ে উঠেছিল আংরাইল সীমান্ত। তবে সাধারণ মানুষ সব থেকে বেশি আতঙ্কিত ছিলেন গরু পাচারের জন্য। অল্প সময়ে কাঁচা টাকা আয়ের লোভে এলাকার অনেক মানুষও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই পাচারের যুক্ত হয়ে পড়েছিল।

বছর কয়েক আগেও প্রকাশ্যে আংরাইল সীমান্ত দিয়ে চলত গরু পাচার। দূর দূরান্ত থেকে ট্রাকে করে সীমান্তে এসে পৌঁছত গরু। রাতে বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে পাচারকারীরা এ দেশে দল বেঁধে ঢুকে পড়ত। তাদের সঙ্গে থাকত আগ্নেয়াস্ত্র। তারা এ দেশ থেকে সরাসরি গরু নিয়ে দেশে ফিরে যেত। গরু নিয়ে যাওয়া হত চাষের খেতের মধ্যে দিয়ে। ফলে ফসলের প্রচুর ক্ষতি হত বলে জানান গ্রামবাসীরা। প্রথম দিকে চাষিরা কম বেশি প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের ধরে ধরে বেধড়ক পেটায়। পরে আর ভয়ে তাঁরা প্রতিবাদ করেননি। বাধ্য হয়েই অনেকেই খেতে চাষবাস করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। রাতে এলাকার দখল চলে যেত পাচারকারীদের দখলে। ভয়ে সন্ধ্যার পর আর কেউ ঘরের বাইরে বের হতেন না। বাড়ির উঠোনের উপর দিয়েই চলত পাচার। ভয়ে কেউ টুঁ শব্দটুকুও করতেন না।

আংরাইলের ওপারে বাংলাদেশের পুটখালি গ্রাম। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

২০০৫ সালে বাড়ির উপর দিয়ে গরু পাচারের প্রতিবাদ করাতে গিয়েছিলেন আরপিএফ জওয়ান নির্মল ঘোষ। বাংলাদেশি পাচারকারীরা তাঁকে খুন করে। পাচারকারীদের গরু ভর্তি গাড়ির ধাক্কায় তুষারকান্তি দাস নামে এক জওয়ানেরও মৃত্যু হয়েছিল। তিনিও পাচার আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। পাচারকারীরা আংরাইল বাজারে পরপর কয়েকটি দোকানে চুরির ঘটনাও ঘটায়।

আরপিএফ জওয়ান খুনের ঘটনার পর এলাকার মানুষ জোটবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদের রাস্তায় নামেন। স্কুল পড়ুয়ারা প্রতিবাদ মিছিল করেন। জনপ্রতিনিধি পুলিশ প্রশাসন বিএসএফ নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় ধরপাকড়। মুখ্যমন্ত্রীও বারাসতে প্রশাসনিক সভা করতে এসে গরুপাচার বন্ধ করতে পুলিশকে কড়া বার্তা দেন। পুলিশ পাচারকারীদের ধরে মাদক আইনে গ্রেফতার করতে থাকে। পাশাপাশি পুলিশ এলাকার মানুষকে নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করে ভরসা দেন। বাসিন্দারাও গরু ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিতে থাকেন। সব মিলিয়ে বছর দুই গরু পাচার কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মানুষ রাতে নির্ভয়ে যাতায়াত করতে শুরু করেছিলেন।

তবে ইদানিং চোরাগোপ্তা ভাবে গরু পাচার শুরু হয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এলাকার এক মহিলার কথায়, ‘‘বহুদিন পর ফের এলাকায় পাচারকারীদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। তবে বিএসএফ সজাগ আছে। তবে আগের মতো জওয়ানেরা আর পাচারকারীদের দেখে গুলি চালায় না। ফলে পাচারকারীদের সাহস বাড়ছে। বাড়ছে ধুর-পাচারও।’’ বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার বলেন, ‘‘গরু পাচার বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কোনও ধরনের পাচারই চলতে দেওয়া হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement