সুন্দরবন দূষণ মামলা স্থগিত হয়েছে কিছু দিন আগে। উপকূলীয় বিধির গেরোয় এ বার মন্দারমণির হোটেল সংক্রান্ত মামলার শুনানি অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতুবি করে দিল জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ। কলকাতায় ওই আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ সুন্দরবনের দূষণ মামলা মুলতুবি করেছিল একই কারণে। পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা, এই নির্দেশের পরে সুন্দরবনের মতো মন্দারমণিতেও দূষণ-সমস্যা বাড়বে।
আদালত জানিয়েছে, উপকূলীয় বিধিভুক্ত এলাকার মানচিত্র নিয়ে দিল্লিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের প্রধান বেঞ্চে মামলা চলছে। তার রায় ঘোষণার পরেই সুন্দরবন ও মন্দারমণি মামলার শুনানি শুরু হবে।
মন্দারমণিতে বহু হোটেল কার্যত সৈকতের উপরে গজিয়ে উঠেছে। উপকূল বিধি অনুসারে যা বেআইনি বলেই অভিযোগ। ওই সব বেআইনি হোটেল নিয়ে বিষ্ণুপদ পাখিরা নামে এক ব্যক্তি পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন। তার শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, হোটেলগুলি বেআইনি কি না, তা বুঝতে গেলে উপকূলীয় মানচিত্র প্রয়োজন। কিন্তু সেই বিষয়টি দিল্লিতে প্রধান বেঞ্চে বিচারাধীন রয়েছে। তাই শুনানি মুলতুবি থাকছে।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, গোড়া থেকেই মন্দারমণিতে হোটেল গড়ার ক্ষেত্রে নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করা হয়নি। মামলা হওয়ায় কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিপদের খাঁড়া আপাতত সরে যাওয়ায় হোটেলগুলি ফের বেপরোয়া হয়ে উঠবে। সুন্দরবনের ক্ষেত্রেও একই বিপদের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
মন্দারমণির কয়েকটি হোটেলের আইনজীবী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানান, শুনানি স্থগিত রাখা হলেও হোটেলগুলিকে আদালত কিছু নির্দেশ দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে নতুন হোটেল তৈরির উপরে। পরিবেশ ছাড়পত্রহীন হোটেলগুলিকে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে ছা়ড়পত্রের জন্য চার সপ্তাহের মধ্যে আর্জি জানাতে বলা হয়েছে। হোটেলগুলি যাতে দূষণ না-ছড়ায়, সেই ব্যাপারে নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে পর্ষদকে। দূষণ সৃষ্টিকারী জেনারেটর ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে হোটেলগুলিকে। ‘‘আদালত মনে করছে, এই সব নির্দেশের ফলে পরিবেশের নতুন করে ক্ষতি হবে না,’’ বলেন পৌষালি।
পরিবেশকর্মীদের অনেকেই কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাঁদের মতে, মামলার আগে পরিবেশ দফতর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ মন্দারমণির হোটেলের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল। তা সত্ত্বেও যে-ভাবে পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে, তাতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। এমনকী সমুদ্রতটের উপরে গাড়ি চালিয়ে লাল কাঁকড়ার বসতি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ দফতরের এক প্রাক্তন বিজ্ঞানীর মতে, ‘‘বেআইনি ভাবে হোটেল তৈরি করে বালিয়াড়ি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সামুদ্রিক ঝ়ড়ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষাকারী প্রাকৃতিক দেওয়াল উবে গিয়েছে। সেই সময়ে পরিবেশ দফতর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সব কিছু দেখেও চুপ করে ছিল।’’
তাই প্রশ্ন উঠেছে, আদালতের চোখরাঙানির ভয় না-থাকলে শুধু প্রশাসনিক নজরদারি দিয়ে দূষণ ঠেকানো যাবে কি? যদি যেত, তা হলে তো মামলারই দরকার হতো না!