ধৃত চিনা নাগরিক। ফাইল চিত্র।
মাদক পাচারের অভিযোগে ধৃত পাঁচ চিনা নাগরিক চরবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত কি না, সেই সংশয় কাটছে না তদন্তকারীদের। কারণ, গত ২৯ জুন গ্রেফতারির পর থেকে এখনও পর্যন্ত জেরায় ধৃতদের থেকে বিশেষ কিছু জানতে পারেনি সিআইডি বা অন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও ধৃতদের গতিবিধি সংক্রান্ত তথ্য থেকে চরবৃত্তির সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিআইডির এক মুখপাত্র।
তদন্তকারীরা বিশেষ চিন্তিত ওই দলের পাণ্ডা ওয়াং শিয়াতংকে নিয়ে। তিনিই একমাত্র ইংরেজি বলতে পারেন। নিজেকে ‘ম্যানেজমেন্ট গ্র্যাজুয়েট’ বলে দাবি করেছেন ওয়াং। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, চিনের অন্যতম বৃহৎ টেলিকম সংস্থায় কাজ করেন ওয়াং। ওই সংস্থা গুরুগ্রামে সদর দফতর খুলে গত ১০ বছরে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার কোটি টাকা এ দেশে বিনিয়োগ করেছে। আমদাবাদের স্মার্টসিটি প্রকল্পেও বিনিয়োগ করেছে তারা।
তদন্তকারীদের প্রশ্ন, এমন একটি বহুজাতিক সংস্থার প্রতিনিধি কেন মাদক-সহ ধরা পড়লেন? তা হলে কি সংস্থার আধিকারিকের বেশে চরবৃত্তিই করছিলেন ওয়াং? কলকাতায় নেমে গাড়িতে দার্জিলিং গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি। কেন দার্জিলিং? ক’দিন আগেই শিলিগুড়ির একটি হোটেল থেকে নকল আধার কার্ড-সহ ধরা পড়েছেন আর এক চিনা। শিলিগুড়ি করিডরে এই পাঁচ জন কেন গিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
জানা গিয়েছে, ওয়াংয়ের এ দেশে আসার ‘বিজনেস ভিসা’ ছিল। ২০১০ সাল থেকে অন্তত ৪০ বার তিনি ভারতে এসেছেন। বার বার গিয়েছেন মুম্বই, হায়দরাবাদ, নাগপুর, বেঙ্গালুরু, কলকাতা এবং গুরুগ্রামে। সেই ওয়াং গত ২৩ জুন মাঝরাতে হংকং থেকে কলকাতায় নামেন। সঙ্গে আত্মীয় শুয়ে ইয়ংহুই। সে দিনই দিল্লি থেকে কলকাতা উড়ে আসেন ছং হাও, লি ছং এবং লিউ পোশিয়ান নামে আরও তিন চিনা নাগরিক। এঁরা নিজেদের গুরুগ্রামের একটি চিনা হোটেলের কর্মী বলে সিআইডির কাছে দাবি করেছেন। এই দাবি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
সিআইডি জেনেছে, সে দিন ওই পাঁচ জনকে নিতে একটি গাড়ি গিয়েছিল দমদম বিমানবন্দরে। তাতে সাতটি খালি ট্রলি ব্যাগ ছিল। পরে ২৯ জুন কলকাতা স্টেশনে ধরা পড়েন ওই পাঁচ চিনা। সে দিনই কলকাতা থেকে চিনে যাওয়ার কথা ছিল বলে তাঁরা দাবি করেছেন। কিন্তু ২৩-২৯ জুন তাঁরা ঠিক কোথায় ছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ওয়াংয়ের দাবি, তাঁরা গাড়ি নিয়ে দার্জিলিং ও বহরমপুরে গিয়েছিলেন। কোথাও হোটেলে ওঠেননি, গাড়িতেই ছিলেন। সিআইডি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘জেরায় সহযোগিতা করছেন না ধৃতেরা। বিদেশি নাগরিক বলে তাঁদের অতি সাবধানে জেরা করা হচ্ছে।’’
ধৃতদের কাছ থেকে চারটি আইফোন, ৫টি চিনা ফোন এবং একটি ল্যাপটপ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেই ফোনে কী কী রয়েছে, তা এখনও জানতে পারেনি সিআইডি। দিল্লি থেকে মেশিন এবং বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসেও ফোনের ডেটা নাগালে পায়নি সিআইডি। ধৃতেরা কোনও ভাবেই পাসওয়ার্ড বলতে রাজি নন। সিআইডি তাই চিনাদের কলকাতার যোগসূত্র খুঁজে বের করতে ব্যস্ত।