(বাঁ দিকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
ইডেন গার্ডেন্সে যে ক’টি বিশ্বকাপের ম্যাচ হয়েছে, গ্যালারিতে রাজ্যের অনেক নেতা-মন্ত্রীকে দেখা গিয়েছে। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইডেনের বক্সে সস্ত্রীক গিয়েছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। গিয়েছিলেন ‘কালারফুল বয়’ মদন মিত্রও। বাইরে থাকলে ফিরহাদ-মদনের সতীর্থেরাও হয়তো যেতেন। কিন্তু তাঁরা এখন জেলবন্দি। রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন প্রেসিডেন্সি জেলের পহেলা বাইশ ওয়ার্ডের কয়েদি। তাঁরা কি রবিবার জেলের দেওয়ালের আড়ালে বসে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতে পারবেন?
শুধু তো বালু বা পার্থ নন। ওই একই ওয়ার্ডে বন্দি রয়েছেন পলাশিপাড়া ও বড়ঞার দুই তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য ও জীবনকৃষ্ণ সাহা। ফলে পহেলা বাইশ ওয়ার্ড কার্যত এখন এমএলএ ব্লকে পরিণত হয়েছে। রবিবেলার মহারণে কি এমএলএ গ্যালারিও তৈরি হতে পারে প্রেসিডেন্সি জেলে? সে বিষয়ে সংশোধনাগারের নিয়ম কী?
প্রেসিডেন্সি জেল সূত্রে বলা হয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই টেলিভিশন রয়েছে। সেখানে বন্দিরা টেলিভিশন দেখেন। এর মধ্যে নতুন কিছু নেই। এ-ও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, চাইলে জ্যোতিপ্রিয়, পার্থেরা খেলাও দেখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষে আলাদা কোনও নিয়ম নেই। সকলের জন্যই এক নিয়ম। তাঁর কথায়, ‘‘রাত্রি সাড়ে ৯টার পরে টেলিভিশনের শব্দ পুরোপুরি কমিয়ে দিতে হয়।’’ বিশ্বকাপের প্রায় সব ম্যাচই দিনরাতের। খেলা শুরু হয়েছে বেলা ২টোয়। শেষ হতে হতে অন্তত রাত সাড়ে ১০টা। যদি না সেই ম্যাচ একেবারেই ‘লো স্কোরিং’ হয়। রবিবার ফাইনালও শুরু বেলা ২টোয়। ফলে ম্যাচ শেষপ্রহরে যদি টানটান হয়ে ওঠে, খেলা যদি রাত সাড়ে ৯টার বেশি গড়ায়, তখন পার্থ, বালু, মানিক, জীবনেরা খেলা দেখলেও তাঁদের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হইহই করা যাবে না। ভারত বিশ্বকাপ জিতলে জয়ধ্বনিও দেওয়া যাবে না। সংশোধনাগারের তেমনই নিয়ম।
এই জেলেই জোড়া পুজো কাটিয়েছেন পার্থ। মানিক, জীবনের অবশ্য এ বারই প্রথম পুজো কেটেছে জেলে। বালুর ক্ষেত্রে তা হয়নি। পুজোর ঠিক পরেই তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। বিজয়া দশমীর মিষ্টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বিধাননগরের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত জানতে পারেন, মন্ত্রী বালুর বাড়িতে ইডি ঢুকেছে। সংবাদমাধ্যমের সামনে অপার বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন সব্যসাচী। তার পরে প্রায় দেড় সপ্তাহের ইডি হেফাজত কাটিয়ে বালু এখন প্রেসিডেন্সি জেলে। পার্থ, মানিকদের ‘পড়শি’ হয়ে রয়েছেন। সংশোধনাগারের বাকি সদস্যদের মতো ওই চার বিধায়কেরও সুযোগ রয়েছে জেলের টেলিভিশনে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখার। তাঁরা খেলা দেখবেন কি না, সেটা অবশ্য তাঁদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করছে।
উল্লেখ্য, বিধায়ক মানিক ‘ফুটবল পাগল’ বলেই পরিচিত। কল্যাণী স্টেডিয়ামে ঘরোয়া লিগের খেলা থাকলে একটা সময়ে তাঁকে দেখা যেত। বালু আবার ক্রিকেট নিয়ে উৎসাহী। তবে পার্থের খেলাধুলায় বিশেষ উৎসাহ আছে বলে শোনা যায়নি। যদিও খেলা দেখা কিছুটা হুজুগের বিষয়ও বটে। তার উপর বিশ্বকাপ ফাইনাল। যেখানে খেলছে ভারত। রবিবার সেই হুজুগ প্রেসিডেন্সি জেলের পহেলা বাইশ ওয়ার্ডে তৈরি হবে কি? রবিবেলাই বলবে।