রুজিরোজগারের টানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্যান্য রাজ্যে চলে যাওয়া শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ভিন্ রাজ্য থেকে কাজের আশায় এখানে আসা শ্রমিকেরা কেমন আছেন, খোঁজ রাখে কি বাংলা?
রাজ্যের শ্রম কমিশনারেট মেনে নিচ্ছে, বাইরের কত শ্রমিক এখানে কাজ করছেন, তা তারা জানে না। কোন রাজ্যের কত শ্রমিক বাংলার কোথায় কোন ক্ষেত্রে ক’দিন কাজ পান, তাঁদের পরিবারের সদস্য ক’জন— তার ঠিকঠাক তথ্য তাদের হাতে নেই। আছে অসম্পূর্ণ তথ্য।
বাংলার হোক বা ভিন্ রাজ্যের, খেটে খাওয়া মানুষগুলোর খোঁজ নেওয়ার তাগিদ খুব বেশি দেখা যায়, এমন দাবি করা চলে না। তবে মালদহ থেকে রাজস্থানে দিনমজুরের কাজ করতে যাওয়া আফরাজুল খানকে কুপিয়ে, পুড়িয়ে খুনের ঘটনার পরে ভিন্ রাজ্যে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ডাক শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। অথচ ভিন্ রাজ্য থেকে বাংলায় আসা শ্রমিকদের অনেকেই যে পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা পাচ্ছেন না, তা স্বীকার করছে রাজ্যের শ্রম দফতর।
ওই দফতরের একটি সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু থেকে আসা বহু শ্রমিক বাংলার ইটভাটা, বিভিন্ন নির্মাণ ক্ষেত্র, চটকল, খনিতে কাজ করেন। ওই সব শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য পেতে রাজ্য জুড়ে এই প্রথম বিশেষ পদক্ষেপ করছে শ্রম কমিশনারেট। আগামী জানুয়ারিকে ‘সচেতনতার মাস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে তারা। তখন পশ্চিমবঙ্গে কাজ করতে আসা ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক এবং তাঁদের নিয়োগকর্তাদের সচেতন করা হবে, তাঁরা যেন কালবিলম্ব না-করে কমিশনারেটে নাম নথিভুক্ত করান।
আরও পড়ুন: মেয়ের শোকে মৃত্যু মায়েরও, স্তব্ধ প্রৌঢ়
‘‘ভিন্ রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসা শ্রমিকদের ব্যাপারে ঠিকমতো তথ্য পাচ্ছি না। জানুয়ারিতে প্রতিটি মহকুমায় তিন দিন ধরে সচেতনতা মেলা হবে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করতে বলা হয়েছে,’’ বলছেন রাজ্যের শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার। ১৯৭৯ সালে তৈরি ‘আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক (নিয়োগ ও কাজের শর্তাবলি সংক্রান্ত নিয়ম) আইন’ পশ্চিমবঙ্গে রূপায়ণ করা যাচ্ছে না বলে শ্রম দফতর সূত্রে মেনে নেওয়া হচ্ছে।
এই অবস্থায় পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশকে চরম দুর্দশার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা ঠোকার তোড়জোড় চলছে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী, চন্দননগরের আইন সহায়তা কেন্দ্রের সচিব বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা শ্রমিকদের অনেকে পশ্চিমবঙ্গের ইটভাটাগুলিতে কাজ করেন। কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গিয়েছে, তাঁদের দুর্দশা অবর্ণনীয়। বহু ক্ষেত্রেই তাঁরা ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেন না। শ্রমিকদের সন্তানদের অনেককেই শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘কারা কোথায় কত পরিযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করেছে, সেই তথ্য শ্রম কমিশনারেটে নেই। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তৈরি ১৯৭৯-র আইন মানা হচ্ছে না।’’
শ্রম কমিশনার জাভেদ জানান, এখন অনলাইনে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করা যায়। তাতে কোনও খরচ নেই। কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকের মৃত্যু হলে বা তাঁদের কেউ আহত হলে সরকার এককালীন আর্থিক সাহায্য দেবে, শিশুসন্তানেরা পাবে পড়ার খরচ। বারবার বলা সত্ত্বেও শ্রমিকেরা সচেতন হচ্ছেন না। ঠিকাদার বা নিয়োগকারী সংস্থাও উদ্যোগী হচ্ছে না। কিন্তু শ্রম কমিশনারেট কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
‘‘আমাদের লোকবল নেই। তা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যেই আমরা পরিদর্শন করি। সময়ে সময়ে ব্যবস্থাও নেওয়া হয় নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে। তবে এটা জরিমানার বিষয় নয়। জরুরি হল সচেতনতা,’’ বলেন শ্রম কমিশনার।