বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
স্কুলে গ্ৰুপ ডি কর্মী নিয়োগ মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-কে ২৮১৯ জনের চাকরি বাতিল করতে বলল কলকাতা হাই কোর্ট। উত্তরপত্রে কারচুপি করে চাকরি পাওয়া এই ২৮১৯ জনের নাম আলাদা ভাবে কমিশনের সাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার পর তাঁদের নিয়োগ বাতিল করারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
বৃহস্পতিবার আদালতে এসএসসি জানায়, সিবিআই তদন্তে ২৮১৯ জনের উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) কারচুপি করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে। তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন বলে জানান কমিশনের আইনজীবী। কারচুপি যে হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বলে জানান তিনি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “আপনারাই যখন বলছেন ২৮১৯ জনের ওএমআর শিট কারচুপির বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, তা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আপনাদের করতে হবে। প্রথমে আলাদা ভাবে এই প্রার্থীদের নাম কমিশনের সাইটে আবারও প্রকাশ করুন। তার পর তাঁদের নিয়োগ বাতিল করুন।” পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার আদালতে কমিশন হলফনামা জমা দেওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে ২৮১৯ জনের নাম আপলোড করার এবং সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হবে। তার ৫ মিনিটের মধ্যে তাঁদের নিয়োগপত্র প্রত্যাহার করবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআইয়ের করা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বিভিন্ন স্কুলে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ হওয়া ১৬৯৮ জনকে আগেই নোটিস ধরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিল শিক্ষা দফতর। বেআইনি ভাবে নিয়োগ হওয়া স্কুলগুলিতে চিঠি পাঠান জেলা স্কুল ইন্সপেক্টররা। চিঠি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধানশিক্ষকদেরও। সেই চিঠিতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা গ্রুপ ডি-র কর্মীদের অবস্থান জানতে বলা হয়। তাঁরা আদৌ কাজে যোগ দিয়েছিলেন কি না বা যদি তাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়ে থাকেন, তা হলে বর্তমানে তাঁরা কোন পদে কত দিন ধরে চাকরি করছেন এমন সব তথ্য স্পষ্ট করে জানাতে বলা হয়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে স্কুল নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। সেই তদন্তে সিবিআই আদালতে জানায় স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তের পর বেআইনি ভাবে গ্রুপ ডি-র পদে নিয়োগ হওয়াদের নামের তালিকা আদালতে জমা দেয়। সেই তালিকার ভিত্তিতে হাইকোর্ট শিক্ষা দফতরকে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ পেয়ে ১৬৯৮ জন গ্রুপ ডি-র কর্মীর তালিকা প্রকাশ করে শিক্ষা দফতর। যাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়।
বুধবার গ্ৰুপ ডি নিয়োগ মামলার শুনানিতে ওএমআর শিট কারচুপিতে নাম থাকা ১৬৯৮ জন চাকরিপ্রাপককে কড়া বার্তা দেন বিচারপতি বসু। যাঁদের নামে দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণিত করতে না পারলে জেল হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি। পাশাপাশি, তিনি সিবিআইকে বলেন, ‘‘যে ১৬৯৮ জনের বিরুদ্ধে ওএমআর শিট কারচুপি হওয়ার কারণে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের কেন মামলায় যুক্ত করছেন না? তদন্তে গতি আনুন, আনতে হবে।’’