ত্রাণের প্রতীক্ষায় আমপান-দুর্গতেরা। ফাইল চিত্র।
আমপান ত্রাণ দুর্নীতির মামলায় নয়া মোড় কলকাতা হাই কোর্টে। সোমবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে দুর্নীতির মামলা করবে আদালতই। শুনানি-পর্বে তিনি বলেন, ‘‘আমপান ত্রাণ সামগ্রীতে দুর্নীতি হয়েছে জেনে হাই কোর্ট চুপ করে থাকতে পারে না।’’
ঘূর্ণিঝড় আমপানের ধাক্কায় বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ-বণ্টনে নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জনস্বার্থ মামলা দায়েরকারী সোমবার আদালতে মামলাটি প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছিলেন। এর পরেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানান, এ বিষয়ে হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করবে। জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হবে।
আমপানের পরে বসিরহাট-২ নম্বর ব্লকের ঘোড়ারস কুলীন গ্রামে প্রায় ২ কোটি টাকার ত্রাণ পাঁচটি ট্রাকে করে পাঠায় রাজ্য। সেই আমপান ত্রাণ সামগ্রী পঞ্চায়েত উপপ্রধানের বাড়ির গুদামে মজুত করার অভিযোগ ওঠে। পরে সেগুলি পাচার করার সময় পাঁচটি ট্রাক আটক করে পুলিশ। অভিযোগ, ওই ঘটনায় শাসকদলের কর্মীরা জড়িত জেনে লঘু ধারায় এফআইআর করে দায় সেরেছিল পুলিশ। এমনকি, কোনও পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে। সোমবার ওই মামলাকারীরা আদালতে জানান, তাঁরা মামলা প্রত্যাহার করতে চান। ওই মামলায় তাঁরা জড়িত থাকতে চান না। অন্য দিকে, এই মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতকে বলেন, ‘‘ত্রাণ সামগ্রীর কিছুই চুরি হয়নি। পুলিশ সুপারকে ডেকে বলেছি তদন্ত সঠিক ভাবে করতে। এই কথা শুনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘ত্রাণসামগ্রী নিয়েও দুর্নীতি! তার পরও শুধুমাত্র লোক দেখানো তদন্ত হয়েছে। রাজ্যের কৌঁসুলি যা বলছেন তা দেখে এটাই মনে হচ্ছে।’’ তার পরই আদালত নিজে ওই মামলার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানায়।
মামলা প্রত্যাহারের পিছনে কারণ কী? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলাকারী পক্ষের এক আইনজীবী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, ওই ঘটনায় স্থানীয় শাসকদলের তরফে চাপ রয়েছে। মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত। চলতি মাসেই ঘোড়ারস গ্রামের ওই ত্রাণ দুর্নীতির মামলায় রাজ্য সরকারের পেশ করা রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে ওই রিপোর্ট পেশ করে রাজ্য। তা ফিরিয়ে দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানানয়, মূল বিষয়কে আড়াল করার জন্য এই ধরনের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এ নিযে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নতুন করে রিপোর্ট দিতে বলা হয় সরকারকে। কিন্তু তার আগেই জনস্বার্থ মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন জানান মামলাকারীরা।