— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় দিতে গিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছে, ১৭টি পন্থায় দুর্নীতি হয়েছে। কী কী উপায়ে দুর্নীতি হয়েছে, তা-ও স্পষ্ট করে জানিয়েছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।
সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছে, ওএমআর শিট স্ক্যান এবং মূল্যায়নের জন্য ‘নাইসা’ নামের একটি সংস্থাকে এসএসসি বরাত দিয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমন পদক্ষেপ সংবিধানের ১৪ এবং ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। নাইসা আবার অন্য একটি সংস্থাকে এই উত্তরপত্র স্ক্যানের কাজ করতে দেয়। এসএসসি দফতরে উত্তরপত্র স্ক্যান করে ওই সংস্থা। অথচ এসএসসি কিন্তু ওই সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়নি। ফলে বরাত দেওয়ার পরেও বিষয়টি বেআইনি থেকে যায়। উত্তরপত্রের আসল কপি এসএসসি নষ্ট করে দেয়। সে ক্ষেত্রে উত্তরপত্রের ‘মিরর ইমেজ’ এসএসসির সার্ভারে সংরক্ষিত থাকার কথা। সিবিআই কিন্তু এসএসসির সার্ভার থেকে ওই ধরনের কোনও ‘মিরর ইমেজ’ খুঁজে পায়নি। সিবিআইয়ের দাবি, ওএমআর শিট স্ক্যান করে তার মিরর ইমেজ সংরক্ষণ না করেই আসল কপি নষ্ট করেছে এসএসসি।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এসএসসি আবার তথ্য জানার অধিকার আইনে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আবেদনকারীদের স্ক্যান করা ওএমআর শিট দেখায়। এসএসসি জানায়, তাদের ডেটাবেস থেকেই ওগুলি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিবিআই এসএসসির সার্ভার থেকে কিছুই পায়নি। গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ— ওই চার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঘোষিত শূন্যপদের থেকে বেশি প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছে। হাই কোর্ট জানিয়েছে, প্যানেলে নাম নেই এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়ে অনেকে চাকরি পেয়েছেন। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও চাকরি দেওয়া হয়েছে। কম নম্বর থাকা সত্ত্বেও চাকরি দেওয়া হয়েছে। মেধাতালিকায় প্রার্থীদের নম্বর প্রকাশ করা হয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ এ-ও জানিয়েছে, প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও কাউন্সেলিং চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেআইনি ভাবে কত জন চাকরি পেয়েছেন তা নিয়ে অস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং রাজ্যের। বেআইনি নিয়োগ আড়াল করতে সুপারনিউমেরিক পোস্ট তৈরি করে নিয়োগের জন্য এসএসসি আবেদন করে। ওই চারটি বিভাগের কোনও ক্ষেত্রেই নিয়োগ পদ্ধতির কোনও রকমের নিয়ম মানা হয়নি।
সোমবার হাই কোর্ট ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছে। এর ফলে বাতিল হয়ে গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি। আদালত জানিয়েছে, এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে। সুদের হার হবে বছরে ১২ শতাংশ। চার সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরত দিতে বলেছে আদালত।