প্রতীকী ছবি।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জল একটি অত্যাবশ্যক প্রয়োজনীয় বস্তু। সেই অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। পুরসভা থেকে পানীয় জলের সংযোগ না মেলায় বৃহস্পতিবার এমনই মন্তব্য করল কলকাতা হাই কোর্ট। এমনকি রাজ্যকে এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ চেয়ে অরুণকুমার রায় নামে নদিয়ার এক ব্যক্তি চাকদহ পুরসভায় আবেদন করেন। সে জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিতেও তিনি রাজি ছিলেন। কিন্তু পুরসভা থেকে জলের সংযোগ দিতে অস্বীকার করা হয়। বলা হয়, পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। ৬০ ফুট দূরে জলের মূল সংযোগ থেকে গিয়েই জল নিতে হবে। পুরসভার ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন অরুণ। আদালতে তাঁর আবেদন ছিল, নিজের অর্থ খরচ করেই তিনি সংযোগ নিতে চেয়েছেন। তার পরও সেই অনুমতি মেলেনি পুরসভার তরফে। ওই এলাকায় এমন আরও অনেকে রয়েছেন, যাঁরা একই রকম ভুক্তভোগী। মামলাকারীর এই আবেদন শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি শম্পা সরকার। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এক ব্যক্তি পানীয় জল পাচ্ছেন না এটা নীতিগত ভাবে আদালতের কাছে আঘাত। এই ধরনের পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত।’’
চাকদহ পুরসভার তরফে আইনজীবী দীপঙ্কর মণ্ডল আদালতকে জানান, ঘর ঘর জল পৌঁছে দেওয়ার পরিকাঠামো পুরসভার নেই। এখন ৬০ ফুট দূর থেকেই জল আনতে হবে। যা শুনে বিচারপতি সরকার বলেন, ‘‘জল পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তা থেকে বঞ্চিত করা যায় না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘উন্নয়নশীল দেশ বা অর্থনীতিতে দাঁড়িয়ে মানুষ পানীয় জল পাবেন না, বিশেষ করে পুরসভার এলাকায় এটা আশা করা যায় না।’’ এর পরই বিচারপতি নির্দেশ দেন, এটা চলতে দেওয়া যায় না। গুরুত্ব সহকারে রাজ্য তথা পুর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখতে হবে।
আগামিদিনে এই সমস্যা সমাধানে পুরসভা কী ব্যবস্থা নিল তা-ও পুরসভাকে জানাতে বলেছে আদালত। আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্য-সহ এই মামলার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত পক্ষকে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। আদালতের এই রায় প্রসঙ্গে মামলাকারীর আইনজীবী কল্লোল বসু বলেন, ‘‘প্রত্যেক মানুষের পানীয় জলের অধিকার রয়েছে। আদালতের এই রায় সেই অধিকার আরও সুদৃঢ় করবে বলে মনে হয়।’’