গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এসএসসির সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়নের ইঙ্গিত দিল কলকাতা হাই কোর্ট। ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়নের ভাবনা বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চের। বৃহস্পতিবার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুনর্মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিতে পারে উচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কাছে আদালত জানতে চায়, পুনর্মূল্যায়নের সব উপকরণ তাদের রয়েছে কি না? এসএসসি জানায়, তাদের কাছে কোনও উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট নেই। তবে আদালত নির্দেশ দিলে পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন প্যানেল প্রকাশ করা সম্ভব। সিবিআইয়ের দেওয়া ওএমআর শিট, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ইন্টারভিউয়ের নম্বরের ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে। তাদের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বসাকের প্রশ্ন, সিবিআইয়ের দেওয়া ওএমআর শিটের উপর কি আপনারা আস্থা বা বিশ্বাস রাখছে? উত্তরে এসএসসি জানায়, এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না তারা। কারণ, এই ওএমআর শিটগুলি কমিশনের দফতর থেকে উদ্ধার হয়নি। আদালতের নির্দেশে সিবিআই সেগুলি হস্তান্তর করেছিল।
এসএসসির অবস্থান সম্পর্কে বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, যদি এসএসসি ওই ওএমআর নিয়ে নিশ্চিত হতে না পারে, তবে কিসের ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেবে আদালত? এসএসসির কথায় নিয়োগ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন সামনে এসেছে। ফলে আদালত এখন নির্দেশ দিলে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন করে প্যানেল প্রকাশ করা যেতে পারে। শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি বলে জানিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
স্কুল সার্ভিস কমিশনে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা প্রমাণিত হলে অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের কী পরিণতি হবে? বুধবার দু’টি বিকল্পের কথা জানিয়েছিল হাই কোর্ট। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, দুর্নীতি প্রমাণিত হলে বাতিল করা হতে পারে সম্পূর্ণ নিয়োগও। এসএসসি মামলার শুনানি চলছে হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চে। বুধবার বিচারপতি বসাকের পর্যবেক্ষণ ছিল, যদি সবটা অবৈধ বা বেআইনি হয়, তা হলে যা পরিণতি হওয়ার সেটাই হবে। যদি দেখা যায়, সত্যিই দুর্নীতি হয়েছে, তা হলে আমাদের কাছে দু’টি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, গোটা নিয়োগ বাতিল করে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, নিয়োগের অংশবিশেষ বাতিল করা। তবে এখনও অনেক কিছু খতিয়ে দেখা বাকি আছে বলে জানান বিচারপতি।
বুধবার বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র আদালতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, কমিশনের কারা কারা এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তা প্রকাশ্যে আনা দরকার। উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটের মূল্যায়ন, ওএমআর স্ক্যান করার বরাত প্রসঙ্গে সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনুক কমিশন। কারণ, টেন্ডার দেওয়ার প্রক্রিয়া কমিশনের দফতরেই হয়েছিল। এখন সেখান থেকে বলা হচ্ছে সিবিআইয়ের রিপোর্টে নাম থাকা সংস্থার কথা তাদের জানা নেই। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এটা কি সম্ভব? এটা কি কোনও বিধিবদ্ধ সংস্থার কার্যপদ্ধতি হতে পারে? এই কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা কী?’’
তার পরেই বিচারপতির মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘যদি কমিশনকে বিশ্বাস না করা যায়, তা হলে তো গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া উচিত। আপনারা বিতর্কিত চাকরিপ্রাপক এবং তাঁদের পরিবারের ১০ হাজার লোকের কথা বলছেন। কিন্তু যে ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁদের কথাও তো ভাবতে হবে।’’