Justice Abhijit Gangopadhyay

মমতা এবং অভিষেককে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের চ্যালেঞ্জ! তৃণমূল বলল, দশ চক্রে ভগবানও ভূত হয়

বিচারপতির এই বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি শাসক দল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিচারপতি ভাল মানুষ। কিন্তু ওঁকে সবাই ভগবান ভগবান বলে একটা মায়াজাল তৈরি করেছে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৫
Share:

কলকাতা হাই কোর্টের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার সন্ধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির হিসাব জানতে চান কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে কিছুটা চ্যালেঞ্জের সুরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি দেখতে চাই আইনের মুখোমুখি হয়ে এ রাজ্যের সরকার কতদিন চলাতে পারে।’’

Advertisement

সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণ চেয়ে একটি চিঠি জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এর পরই সন্ধ্যাবেলায় হাই কোর্ট থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিচারপতি। সেখানে বলেন, ‘‘ওদের অসুবিধা হচ্ছে আমার বিভিন্ন পদক্ষেপে ওদের বিভিন্ন চোরেরা জেলে রয়েছেন। আরও কিছু জেলে যাবেন। সেই জন্যই আমার উপর এত রাগ।’’

এর পরেই বিচারপতির সংযোজন, ‘‘যে ভাবে দুর্নীতির তদন্ত আটকানোর জন্য মামলা হচ্ছে, তাতে মাঝে মাঝে মনে হয়, কোন দিন দেখব, একদল চোরও বিরাট বিরাট আইনজীবী দাঁড় করিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবে, আমরা চৌর্যবৃত্তি করে বাঁচি। আমাদের বিষয় সম্পত্তি সবই চুরি করে করা। যদি এটা বন্ধ হয়ে যায় আমাদের জীবন এবং জীবিকার অসুবিধা হবে। সুতরাং সেটা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ ধারাকে লঙ্ঘন করবে। আমাদের অবাধে চুরি করার অধিকার দেওয়া হোক।’’

Advertisement

বিচারপতি কটাক্ষের সুরেই বলেছেন, আগামী দিনে এমন মামলা হাই কোর্টে বা সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হলে অবাক হবেন না তিনি। যদিও বিচারপতির এই বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি শাসকদল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিচারপতি ভাল মানুষ। খুব ভাল আড্ডা দেন। কিন্তু ওঁকে সবাই ভগবান ভগবান বলে একটা মায়াজাল তৈরি করেছে। তবে ওঁকে একটি বাংলা প্রবাদের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই— দশচক্রে ভগবান ভূত। বিচারপতিকে আমাদের অনুরোধ, এই প্রবাদটিকে সফল হতে দেবেন না।’’

সকালেই এজলাসে বসে কুণালের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের কথা বলেছিলেন বিচারপতি। এ-ও বলেছিলেন, ‘‘উনি গালাগাল করেন ঠিকই কিন্তু মানুষটা খারাপ নয়।’’ কুণাল বিচারপতিকে পাল্টা জবাব দেওয়ার সময় সেই সৌজন্যই ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

সোমবার হাই কোর্ট থেকে বেরনোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেন বিচারপতি। বেশ কিছু প্রশ্নও তোলেন—

প্রসঙ্গ অভিষেক

প্রথমেই আসে অভিষেকের সম্পত্তির প্রসঙ্গ। বিচারপতি বলেন, ‘‘অভিষেক একজন নেতা। তাঁর এত সম্পত্তি কোথা থেকে আসে। তিনি কি হলফনামা দিয়ে ঘোষণা করবেন? তিনি কি সেই হলফনামা তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করবেন তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কত? তিনি কি এটা করতে পারবেন?’’ বিচারপতির বক্তব্য, তিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই জানতে চান এই রাজনৈতিক নেতাদের কত সম্পত্তি রয়েছে। প্রয়োজনে অভিষেকের সমসাময়িক অন্য নেতাদের কাছেও তিনি এই আবেদন করবেন। তিনি বলেছেন, ‘‘ সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা দেখতে চাই কার কত সম্পত্তি আছে। কে কত সম্পত্তি করেছেন? কার কতটা সম্পত্তির উৎস রয়েছে। অভিষেক যদি সমাজমাধ্যমে ওই পোস্ট করেন, তবে তাঁর সমসাময়িক নেতা ধরুন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বা অন্য নেতাদের কাছেও একই আবেদন রাখব। তাঁরাও সম্পত্তির হলফনামা তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়াতে দিন আমরা দেখতে চাই।’’

তাঁর বিরুদ্ধে চিঠি

বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের ছাত্রনেতা সুদীপ রাহা। তাঁকে সেই চিঠি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিচারপতি বলেন, ‘‘এ রকম কোনও মানুষের কথা আমি শুনিনি। তিনি কী চেয়েছেন, তিনিই জানেন। তবে গত দেড়- দু’বছর ধরে আমাকে সন্ত্রস্ত করার জন্য অনেক কিছু করা হয়েছে। কখনও কেউ কোর্টে পেপার ওয়েট নিয়ে ঢোকে। আবার কখনও অন্যান্য জিনিস নিয়ে ঢুকে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। কোর্ট বয়কট করার চেষ্টা করে।’’ বিচারপতির কথায়, তাঁর পদক্ষেপে অনেককে জেলে যেতে হয়েছে বলেই তাঁর উপর এত রাগ।

প্রসঙ্গ সন্দেশখালি এবং সরকারি মামলার খরচ

সাংবাদিকেরা বিচারপতিকে প্রশ্ন করেছিলেন সন্দেশখালিতে ইডি অফিসারদের উপর হামলার ঘটনা নিয়েও। জবাবে বিচারপতি বলেন, ‘‘ইডি অফিসারদের হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। তখনও বলেছি, ‘দুর্নীতির তদন্ত আটকাতে রাজ্য সরকার কত টাকা সুপ্রিম কোর্টে খরচ করল? তার পরিমাণটা কি তারা জানাবে? কারণ আমি এর জবাব জানতে চাই। না জানালে অন্য ভাবে জানতে চাইব। আজও সংবাদ মাধ্যমের মারফত জানতে চাইছি। এরপর অফিসিয়ালি প্রশ্ন করব দুর্নীতির তদন্ত আটকাতে কত টাকা খরচ করা হয়েছে? তাতে যদি আমার বিরুদ্ধে চিঠি লেখে, লিখুক না।’’

বিচারপতি অমৃতি সিংহ এবং কালীঘাটের কাকু

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামীর কণ্ঠস্বরের পরীক্ষা নিতে চেয়েছিল ওরা। কেন? তিনি কি আসামি? যিনি আসামি তাঁর কণ্ঠস্বরের পরীক্ষা নেওয়ার কোন চেষ্টা রাজ্য সরকার করল না। একটা হাসপাতালকে ব্যবহার করে তাঁকে আটকে রাখল। তাও রাখতে পারল না। আর এদিকে একজন উকিল যদি কারও হয়ে ওকালতি করে থাকেন তবে তাঁর কণ্ঠস্বরের পরীক্ষা কেন করতে হবে।’’

সরকারকে চ্যালেঞ্জ

বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘এ টা কী ধরনের রাজ্য চলছে, কী ধরনের প্রশাসন চলছে, তা আমরা বুঝতে পারছি সকলেই। দেখা যাক কতদিন চলে তারা। আইনের মুখোমুখি হয়ে তারা কত দিন চালাতে পারে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement