Calcutta High Court

এ বার ২৭ সপ্তাহের নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতের অনুমতি হাই কোর্টের, তবে সিদ্ধান্ত নেবে এসএসকেএম!

মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনের (১৯৭১) ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ীই ২৪ সপ্তাহ পরে গর্ভপাতের বিষয়ে বাধা রয়েছে। ২৪ সপ্তাহের পরে গর্ভপাতের নজিরও কম।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ২০:০৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ঠিক ১০ দিন আগে এক অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। গর্ভপাত সংক্রান্ত আইনের বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে গিয়েই ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বাকে ওই অনুমতি দেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। ১০ দিন পর আবার এক নাবালিকাকে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই গর্ভপাতের অনুমতি দিলেন তিনি। এ বার ওই নাবালিকা ২৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। বয়স মাত্র ১৩ বছর।

Advertisement

নিয়ম অনুযায়ী ২০ সপ্তাহের পরই গর্ভপাত ঝুঁকিপূর্ণ। একজন নাবালিকার ক্ষেত্রে তো বটেই। আইন বলছে সেই সময়কে তবু বিশেষ প্রয়োজনে টেনেটুনে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কিন্তু ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর গর্ভপাতের অনুমতি নেই আইনে। ঝুঁকি নিয়েই বিচারপতি ভট্টাচার্য ওই অনুমতি দিয়েছেন বৃহস্পতিবার। তবে একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই নাবালিকাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল টিম গঠন করে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করে গর্ভপাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এসএসকেএমের চিকিৎসক দল। তাঁরা যদি মনে করে এই গর্ভপাত করা সম্ভব, তবেই আদালতের নির্দেশ কার্যকর হবে।

কিন্তু কেন হঠাৎ ঝুঁকি নিয়ে ওই নাবালিকাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিল আদালত? নাবালিকার আইনজীবী প্রতীক ধর এবং চিত্তপ্রিয় ঘোষ জানান, মেয়েটির বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে। বয়স ১৩ বছর। তবে ১৩ বছরের ওই কিশোরীর বাবা-মায়ের কাছে থাকে না। তার দেখভাল করেন এক কাকু। বাবা-মা পরিযায়ী শ্রমিক। মেয়েকে ওই ব্যক্তির দায়িত্বে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অভিযোগ, ওই কাকুই ধর্ষণ করেছেন নাবালিকা ভাইঝিকে।

Advertisement

অভিযোগ, সম্প্রতিই মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ হওয়ায় ওই কাকুই তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসক পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি ওই মেয়েটির অভিভাবককে ওই কাকুকে জানালেও পরে পুলিশেও খবর দেন তিনিই। এর পর তদন্ত করে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে কাকুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শিশুদের অধিকার রক্ষার একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে হাই কোর্টে গর্ভপাত করানোর মামলাও করে তারাই। বৃহস্পতিবার এই মামলারই রায় দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।

মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনের (১৯৭১) ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ীই ২৪ সপ্তাহ পরে গর্ভপাতের বিষয়ে বাধা রয়েছে। ২৪ সপ্তাহের পরে গর্ভপাতের নজিরও কম। আইন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কোনও মহিলা, নাবালিকা বা নাবালিকার পরিবার ২০ সপ্তাহ সময় পর্যন্ত গর্ভপাত করাতে চেয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিশেষ পরিস্থিতিতে তা ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। তার পরে গর্ভপাত করাতে গেলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন।

গত বছর এমনই একটি ঘটনায় ২৮ সপ্তাহের যমজ ভ্রূণ নষ্ট করার অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তবে সে ক্ষেত্রে ১২ বছর বয়সি অন্তঃসত্ত্বার প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। ওই ঘটনাতেও ধর্ষণের অভিযোগ ছিল।

বম্বে হাই কোর্টেও এ ধরনের নির্দেশের নজির রয়েছে। ভ্রূণের গঠন অস্বাভাবিক হওয়ার কারণে বম্বে হাই কোর্ট ৩৩ সপ্তাহের মাথায় গর্ভপাত করার অনুমতি দিয়েছিল। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, অস্বাভাবিক ভ্রূণের ক্ষেত্রে জন্ম দেওয়ার অধিকার একমাত্র মা নিতে পারেন।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গর্ভধারণের ৩৫ সপ্তাহ পর গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, জন্মের পর শিশুর স্বাভাবিক জীবন যাপন করার সম্ভাবনা ক্ষীণ ছিল।

সম্প্রতি, ২১ অগস্ট ২৬ সপ্তাহের যে অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিলেন বিচারপতি ভট্টাচার্য তাঁর বয়স ছিল ১১। সেটি ছিল সবচেয়ে কমবয়সি নাবালিকার ভ্রূণ নষ্ট করার সিদ্ধান্ত। তার ঠিক দশ দিনের মাথায় একই ধরনের একটি ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ভট্টাচার্য ১৩ বছরের অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement