কলকাতা হাই কোর্ট —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের আগে মুর্শিদাবাদে নওদার চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস এবং আরএসপি-র তিন অপহৃত প্রার্থীকে খুঁজে বার করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের নির্দেশ, আগামী ১১ অগস্ট নওদা বিডিও অফিসে বোর্ড গঠনের কাজ হবে। তার আগে ওই তিন জনকে খুঁজে বার করে বিডিও অফিসে হাজির করাতে হবে পুলিশকে। তা ছাড়া প্রার্থীদের পরিবারের জন্যও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন বিচারপতি।
গত ৩ অগস্ট বহরমপুরের একটি হোটেল থেকে কংগ্রেস ও আরএসপি-র ১৩ জন বিজয়ী পঞ্চায়েত প্রার্থীর মধ্যে তিন জনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট দুই দল। আঙুল ওঠে তৃণমূলের দিকে। অভিযোগ করা হয়, ওই বিজয়ী প্রার্থীদের বাড়িতে নানা রকম উপদ্রব করা হচ্ছে। বোর্ড গঠনের দিন যাতে পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচনের সময় তাঁরা উপস্থিত থাকতে না পারেন, সেটাই শাসকদলের লক্ষ্য বলে অভিযোগ করা হয়। সম্প্রতি এ নিয়ে তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লেখেন বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী বিরোধী প্রার্থীদের কখনও অপহরণ করা হচ্ছে। কখনও খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘‘এই ভয়-ভীতি এবং হুমকির সম্মুখীন হয়ে কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীরা তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।’’ অন্য দিকে, জয়ী প্রার্থীদের নিরাপত্তা চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন স্থানীয় বিরোধী নেতৃত্ব। ওই মামলারই শুনানি হয় জয় সেনগুপ্তের এজলাসে।
অন্য দিকে, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লকের ১৭টি পঞ্চায়েতের বিজেপির জয়ী প্রার্থীরা যাতে বোর্ড গঠনের সময় হাজির থাকতে না পারেন, তার জন্য হয়রান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের। বিজেপির অভিযোগ, তাদের জয়ী প্রার্থীদের কাউকে পুরনো মামলায় তলব করছে পুলিশ। কোথাও আবার শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জয়ীদের নিজেদের এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না। এমনই অভিযোগ করে ওই প্রার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা চেয়ে হাই কোর্টে গিয়েছে বিজেপি। বুধবার সেখানে বোর্ড গঠন। মঙ্গলবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে ওই মামলার শুনানি হতে পারে।
এর আগে নন্দীগ্রামের ১৫ জয়ী বিজেপি প্রার্থীকে রক্ষাকবচ দিয়েছে হাই কোর্ট। তাঁদের গ্রেফতারির উপর অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ। কিন্তু আদালতে বিজেপি অভিযোগ করেছে, এখনও পর্যন্ত ১৮টি এফআইআর হয়েছে। বিজেপি যাতে বোর্ড গঠন করতে না পারে, তার জন্য ভুয়ো মামলা দেওয়া হচ্ছে তাদের প্রার্থীদের।
এ ছাড়া নদিয়ার রানাঘাট-১ ব্লক, হবিবপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় একই ভাবে বিরোধীদের বোর্ড গঠনে শাসকদল বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ। কোথাও নির্দল জয়ী প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে দলে টানা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় পুলিশ নিরাপত্তায় বোর্ড গঠন, প্রয়োজনে কোথাও বোর্ড গঠনের সময় পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার দাবিতে মামলা হয়। সেই আবেদন গ্রহণ করেছে আদালত। মঙ্গলবারের মধ্যেই সমস্ত মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।