বনগাঁ পুরসভার অনাস্থা ভোট ঘিরে মঙ্গলবার এ ভাবেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। —ফাইল চিত্র
মঙ্গলবার বনগাঁ পুরসভার বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, বিচারপতি ঘটনার জন্য দায়ী করেন পুরসভার চেয়ারম্যানকে।
বিধাননগর পুরনিগম নিয়ে মেয়র সব্যসাচী দত্তের করা মামলার শুনানির সময় বুধবার ওই মন্তব্য করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘শাসক দলের প্রশ্রয়ে ওই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সব দেখেও নিষ্ক্রিয় ছিল।”
এ দিন সব্যসাচীর মামালার শুনানি চলাকালীনই বিজেপির পক্ষ থেকে বনগাঁর ঘটনার উল্লেখ করে আদালতের দ্বারস্থ হন বিজেপির আইনজীবী। আদালতের পূর্ববর্তী রায় মানা হয়নি বলে অভিযোগ করে বিজেপি। সেই সময়েই বনগাঁ পুরসভার ঘটনা নিয়ে ভর্ৎসনার সুরে এই মন্তব্য করেন বিচারপতি। তিনি বিজেপির আবেদনকারীকে নতুন করে আবেদন করতে বলেন। বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানির সম্ভাবনা।
আরও পডু়ন: পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় রাহুল, ফের ‘প্রিয়ঙ্কা লাও কংগ্রেস বাঁচাও’ দাবি দলে
মঙ্গলবারই অনাস্থা ভোট ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বনগাঁ পুরসভা সংলগ্ন এলাকা। অনাস্থা ভোট ঘিরে ভাঙচুর, বোমাবাজি, পুলিশের লাঠিচার্জ— কোনও কিছুই বাকি ছিল না।
মঙ্গলবার ঘটনার সূত্রপাত তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া পুরসভার দুই কাউন্সিলরকে ঘিরে। ২২ আসনের বনগাঁ পুরসভা ছিল তৃণমূলের দখলে। কাউন্সিলরের সংখ্যা ছিল ২০। এক জন করে কাউন্সিলর ছিল সিপিএম এবং কংগ্রেসের। কিন্তু সম্প্রতি ১৪ জন কাউন্সিলর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তার মধ্যে অবশ্য পরে তিন জন ফিরেও যান তৃণমূলে। অর্থাৎ, নতুন সমীকরণ দাঁড়ায়— বিজেপি ১১, তৃণমূল ৯, কংগ্রেস ১, সিপিএম ১।
বিজেপিতে থেকে যাওয়া দুই কাউন্সিলর হিমাদ্রি মণ্ডল এবং কার্তিক মণ্ডলের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্যা ধারায় মামলা ছিল। তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে, আদালত সাত দিন ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে নির্দেশ দেয়। বিজেপির অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ওই দুই কাউন্সিলরকে পুরভবনে ঢুকতে বাধা দেয়। এবং, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অশান্তি শুরু হয়ে যায় পুর ভবনের সামনে।
আরও পড়ুন: মেট্রোর দরজা বন্ধে বাধা দিলেই ৫০০ টাকা জরিমানা, হাত আটকে মৃত্যুর জেরে কঠোর হচ্ছে আইন
মঙ্গলবার বিকেলে বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য দাবি করেন, বিজেপি অনাস্থা প্রমাণ করতে পারেনি। তাই পুরসভা তৃণমূলেরই দখলে। কারণ বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির জন্য নির্দিষ্ট ঘরে পৌঁছননি বিজেপির কাউন্সিলররা। অন্য দিকে, বিজেপিও পাল্টা দাবি করে যে তারাই দখল করেছে পুর বোর্ড। বিজেপির যুক্তি ছিল, তারা পুর কমিশনারের ঘরে ১১ জন কাউন্সিলরের সই করা নথি জমা দিয়েছে। সিপিএম কাউন্সিলর আস্থা ভোটে অংশ না নেওয়ায় বিজেপির বোর্ড দখল করার জন্য প্রয়োজন ছিল ১১ জন কাউন্সিলরের ভোট।
বোর্ড গঠন নিয়ে ওই ঘটনার উল্লেখ করেই এ দিন আদালতে বিজেপির আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁদের দুই কাউন্সিলরকে পুরভবনে ঢুকতে বাধা দিয়েছে।