CAG

CAG: খরচের শংসাপত্র দিতে দেরি, প্রশ্ন সিএজি রিপোর্টে

রাজ্যের অবশ্য বক্তব্য, এই রিপোর্ট শেষ কথা নয়। তা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির কাছে যাবে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২ ০৭:২৮
Share:

ফাইল চিত্র।

দুর্নীতি ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জেলাশাসকদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সঠিক পথে দরপত্র দাখিলের কথা বলেছেন অর্থসচিব মনোজ পন্থও। কিন্তু এই সময়েই আর্থিক পরিচালনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার বিষয়ে কার্যত সতর্ক করে দিল সিএজি-র (ক্যাগ) রিপোর্ট।

Advertisement

২০২০-২১ সালের জন্য সম্প্রতি বিধানসভায় পেশ করা এই রিপোর্টে একাধিক বিষয় রাজ্যের নজরে আনা হয়েছে। যার অন্যতম সদ্ব্যবহার শংসাপত্র (ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট বা ইউসি)। কোনও প্রকল্প বা খাতে বরাদ্দ টাকা যে তাতেই খরচ হয়েছে, তার প্রমাণ হিসেবে ওই শংসাপত্র দাখিল করে সংশ্লিষ্ট দফতর। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৬২টি ইউসি দাখিল করা হয়নি। যার মোট আর্থিক মূল্য ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, বিদ্যালয় শিক্ষা, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সব চেয়ে বেশি সংখ্যায় ইউসি দাখিল করেনি। যা বকেয়া ইউসি-র ৩৯.৩০ এবং অর্থের ৬৫.২০%। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদেরও অনেকে জানাচ্ছেন, এই তিন দফতরে বিপুল অর্থের কাজ হয়। বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের অনুদান বা অংশীদারিও থাকে। রিপোর্টে সিএজি-র বক্তব্য, “যে উদ্দেশ্যে মঞ্জুরি প্রদান করা হয়েছিল, প্রাপকেরা তাতেই তা ব্যয় করেছেন— শংসাপত্রের অভাবে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি।....ইউসি দাখিলে অনিশ্চয়তা তছরুপের ঝুঁকিতে পরিপূর্ণ।” রিপোর্টে আরও দাবি, “শংসাপত্র দাখিল না করার উদারহণগুলি নিয়মিত সিএজি-র প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। তা সত্ত্বেও এই অবস্থার উন্নতি হয়নি...।”

রাজ্যের অবশ্য বক্তব্য, এই রিপোর্ট শেষ কথা নয়। তা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির কাছে যাবে। তারা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খতিয়ে দেখবে বিষয়টি। তা ছাড়া, যে সময়ের রিপোর্ট সিএজি পেশ করেছে, তখন কোভিড চলছিল বলেও মনে করিয়েছে তারা।

Advertisement

আপৎকালীন (কন্টিনজেন্ট) বিল নিয়েও কার্যত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিএজি। সাধারণত, এই তহবিল থেকে আকস্মিক খরচ করা হয়। ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট কন্টিনজেন্ট বিল’ (এ সি বিল)-এর মাধ্যমে টাকা তোলা যায়। কিন্তু খরচের পরে সাধারণত এক মাসের মধ্যে ‘ডিটেল্ড কন্টিনজেন্ট বিল’(ডি সি বিল)-এর মাধ্যমে সেই হিসাব বুঝিয়ে দিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, কখনও এই সময় ৬০ দিনের বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ রিপোর্ট বলছে, ২০২০-২১ সময়কাল পর্যন্ত আটটি দফতরের ক্ষেত্রে অমীমাংসিত ডি সি বিলের উদাহরণ লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেই দফতরগুলি হল, স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, মহিলা-শিশু ও সমাজকল্যাণ, কৃষি, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, বিপর্যয় মোকাবিলা ও অসামরিক প্রতিরক্ষা এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন। এর মধ্যে অবশ্য স্বরাষ্ট্র ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ডি সি বিল দাখিলের হার তুলনায়
কিছুটা বেশি।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কোভিড পরিস্থিতিতে বিপুল খরচ করতে হয়েছে রাজ্যকে। আবার কল্যাণ প্রকল্পের অনেকটাই (যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার) পরিচালিত হয় নারী-শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মাধ্যমে। বরাদ্দের দিক থেকে এই দফতরগুলি উল্লেখযোগ্য। রিপোর্টে সিএজি উল্লেখ করেছে, “অমীমাংসিত ডি সি বিলগুলিতে অনিয়ম প্রতিফলিত হয়।...নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। ডি সি বিল না পাওয়া পর্যন্ত হিসাবে দেখানো ব্যয় সঠিক বা চূড়ান্ত বলে গণ্য করা যাবে না।”

প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, প্রশ্ন ওঠা প্রতি ক্ষেত্রেই নজরে রেখেছে রাজ্য। খরচের হিসাব নিখুঁত রাখার পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। শুধু শংসাপত্র নয়, প্রকল্পের অগ্রগতি এবং গুণমান খতিয়ে দেখা হয় জেলা এবং জেলা পরিষদ স্তরে। টেন্ডার-নীতি মেনে চলার বিষয়ে কঠোর নজরদারি রয়েছে। সরকারের এক শীর্ষকর্তার দাবি, “এই সরকার কোনও খাতকে অডিটের বাইরে রাখেনি। স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে নিশ্চিত বলেই তা করা হয়েছে।” শাসকদলের এক শীর্ষনেতার মন্তব্য, “পিএম-কেয়ার তো অডিটের আওতাতেই নেই। তার বেলা!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement