বিএসএনএলের কেব্লে সমস্যার জেরে বুধবার আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার নানা এলাকায় দুর্ভোগ পোহালেন গ্রাহকেরা। বিএসএনএলের লাইন ঘনঘন বিকল হওয়ায় জেরবার গ্রাহকদের দাবি, কেন এত গোলমাল হচ্ছে তা রহস্যের।
বিএসএনএল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন মোট চারটি জায়গায় কেব্লে সমস্যা হওয়ায় ঘণ্টা চারেক পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। সংস্থার আসানসোলের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার রানাপ্রসাদ দাস বলেন, ‘‘আসানসোলের কাল্লা মোড়, রানিগঞ্জের পাঞ্জাবি মোড়ের কাছে, সিউড়ির কাছে এবং বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় কেব্লে সমস্যা হয়েছিল। সে জন্য পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে।’’ বুধবার রাতে তিনি জানান, মেরামতির কাজ এখনও শেষ হয়নি।
বিএসএনএল সূত্রের খবর, এ দিন ভোরে রানিগঞ্জে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজের সময়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সকাল ৯টা নাগাদ বড়জোড়ার কাছে কাটা পড়ে বিএসএনএলের কেব্ল। ফলে, সকাল থেকে বিএসএনএলের মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পুরুলিয়ার টিডিএম (বিএসএনএল) গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুই জেলায় রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ভোরে রানিগঞ্জের কাছে, পরে বড়জোড়ায় অপটিক্যাল ফাইবার কাটা পড়ে। তাই ভোগান্তি হয়েছে।’’
বিএসএনএল সূত্রে জানা যায়, পুরুলিয়া থেকে ফোন করলে সেই কল দুর্গাপুর ও সল্টলেক হয়ে নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে পৌঁছয়। পুরুলিয়া থেকে টেলিফোন কল দুর্গাপুর যাওয়ার ক্ষেত্রে দু’টি রাস্তা রয়েছে। একটি আসানসোল, অন্যটি বাঁকুড়া হয়ে। পুরুলিয়ার টিডিএমের দাবি, ‘‘বুধবার ভোরে আসানসোল হয়ে যাওয়ার রাস্তায় রানিগঞ্জের কাছে কেব্ল কাটা পড়ে। তার পরেও বাঁকুড়া হয়ে যাওয়ার রাস্তা খোলা ছিল। ফলে সেই রাস্তা দিয়ে ফোন কল গিয়েছে। কিন্তু পরে সে রাস্তাতেও কেব্ল কাটা পড়ায় পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।’’
গ্রাহকদের দাবি, রাস্তার পাশে মাটির নীচে বিএসএনএলের মতো অন্য সংস্থারও অপটিক্যাল ফাইবার গিয়েছে। কিন্তু তারা যদি সমস্ত বাধা কাটিয়ে ঠিক পরিষেবা দিতে পারে, তাহলে বারবার বিএসএনএলেই কেন সমস্যা হচ্ছে? কিছু গ্রাহকের কথায়, ‘‘পরিষেবা ব্যাহত হলেই বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ কেব্ল কাটা পড়ার ঘটনা সামনে আনছেন। কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে বেসরকারি টেলিকম সংস্থার কেব্ল কাটা পড়ে পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার ঘটনা কার্যত শোনাই যায় না। পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই তো?’’
বিএসএনএলের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য জানান, ৯০-এর দশকে অপটিক্যাল ফাইবার পাতার কাজ শুরু হয়েছিল। সেই সময় রাস্তার পাশেই কেব্ল পাতা হয়। পরে রাস্তা সম্প্রসারিত হলে কী হবে, ভাবা হয়নি। তখন কিছুটা দূরে কেব্ল পাতলে এই সমস্যা এড়ানো যেত। অন্য টেলিকম সংস্থা রাস্তা থেকে অনেকটা দূরে কেব্ল পেতেছে। তাই তাদের এই ধরনের সমস্যা কম।
তবে আশার কথা শোনাচ্ছে বিএসএনএল। রাস্তা সম্প্রসারণে কেব্ল কাটা পড়ার সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে ইতিমধ্যে বিকল্প পরিকল্পনা নিচ্ছে সংস্থা। এ রাজ্যে সংস্থার মোবাইল ফোনের দায়িত্বে থাকা এজিএম ডি কে বেহেরা জানান, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কেব্লও কাটা পড়ছে। এর স্থায়ী সমাধানে পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যুৎবাহী টাওয়ার দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রস্তাব সংস্থার বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে।