প্রকৃতির নাড়ি বুঝতে ডুয়ার্সে প্রজাপতি কানন

এ বার প্রজাপতির পাখা আঁকড়েই উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্সের জলবায়ু বদল এবং পরিবেশ, জীববৈচিত্র বুঝতে চাইছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প। 

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৯
Share:

ম্যাগপাই ক্রো প্রজাপতি। নিজস্ব চিত্র

‘‘কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা,’’ প্রজাপতির কাছে মুগ্ধ জিজ্ঞাসা ছিল কবির। পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, রংবেরঙের ডানা নিয়ে প্রজাপতি শুধু সুন্দর পতঙ্গ নয়, জলবায়ু বদল এবং পরিবেশ দূষণের মাত্রা নির্ধারণের সূচকও। জলবায়ু বদলালে বা পরিবেশ দূষণ হলে বদলে যায় ওদের গতিবিধি, বদল ঘটে ওদের জীবনচক্রে। তাই এ বার প্রজাপতির পাখা আঁকড়েই উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্সের জলবায়ু বদল এবং পরিবেশ, জীববৈচিত্র বুঝতে চাইছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প।

Advertisement

বন দফতর এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে রাজাভাতখাওয়ায় সাড়ে সাত হেক্টর জমিতে গড়ে উঠছে প্রজাপতি উদ্যান। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানান, বক্সা এবং লাগোয়া এলাকায় প্রায় ৫০০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। তার মধ্যে আছে কিছু বিরল প্রজাতিও। ওই জমিতে এমন সব গাছ লাগানো হচ্ছে, যেগুলো প্রজাপতির খাবার ও বাসস্থান হয়ে উঠতে পারে। থাকছে গবেষণাগারও। প্রজাপতির ডিম থেকে শূককীট বেরোলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিজ্ঞানীরা তা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে নিয়ে শূককীট থেকে গুটিপোকা এবং গুটিপোকা থেকে প্রজাপতি হওয়ার জীবনচক্র পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে পর্যটকেরা বক্সায় বেড়াতে গিয়ে হাতে করে সেই প্রজাপতি বাগানে ছাড়তে পারবেন।’’

কিন্তু এর বাইরে থেকে যাচ্ছে জলবায়ু বদল এবং পরিবেশ দূষণের বিষয়টি। অনেকেই বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু বদলের প্রভাব পড়ছে হিমালয়ের পাদদেশের এই এলাকায়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক সুদীপকুমার ভট্টাচার্যের মতে, তরাই এলাকায় জলবায়ুর কতটা বদল হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে তরাইয়ের তাপমাত্রা বেড়েছে এবং বৃষ্টির চরিত্র চিরাচরিত ধারা মেনে চলছে না। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, তরাই-ডুয়ার্স জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ এলাকা। জলবায়ু বদলে গেলে তো তার প্রভাব সেই জীব এবং উদ্ভিদের উপরে পড়বে। পরিবেশবিদদের একাংশের দাবি, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ইতিমধ্যেই বহু জায়গায় জীববৈচিত্রের ক্ষতি হয়েছে।

Advertisement

প্রজাপতি উদ্যানের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে অর্জন বসুরায় জানান, বাতাসে দূষণ বেশি হলে প্রজাপতি শ্বাস নিতে না-পেরে সেখান থেকে সরে যায়। ঋতুচক্রের উপরে গাছের পাতা ঝরা এবং নতুন পাতা গজানো নির্ভর করে। বসন্তে নতুন পাতা আসার উপরে নির্ভর করে প্রজাপতির ডিম পাড়া, শূককীটের বেঁচে থাকা। ফলে মার্চ-এপ্রিলের আগেই গাছে নতুন পাতা গজালে বুঝতে হবে ঋতুচক্র বদলাচ্ছে। সে-ক্ষেত্রে প্রজাপতির জীবনচক্রে কী প্রভাব পড়ছে, সেটাও দেখা যেতে পারে। ‘‘প্রজাপতি পরাগমিলন ঘটিয়ে গাছকে বাঁচায়। আবার টিকটিকি, গিরগিটি, ব্যাঙ, পাখির খাবার হল প্রজাপতি। ফলে এই প্রজাপতি উদ্যানকে ঘিরে সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠবে,’’ বলছেন অর্জনবাবু।

ওই প্রকল্পে যুক্ত সংস্থার অন্যতম সদস্য তমোঘ্ন সেনগুপ্ত জানান, এক-এক প্রজাতির প্রজাপতি এক-একটি গাছে ডিম পাড়ে। সেই অনুযায়ী মুসান্ডা, গন্ধরাজ লেবু, আকন্দ গাছ লাগানো হচ্ছে। প্রজাপতির মধু খাওয়ার জন্য থাকছে রঙ্গন, অতসীর মতো ফুলের গাছ। অনেক জংলি ফুলের গাছও থাকছে বাগানে।

প্রজাপতির পাখায় ডুয়ার্সের কোন ছবি ধরা পড়ে, সেটাই এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement