হাসপাতালে করিম। নিজস্ব চিত্র
বাস থেকে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছিল পা। অভিযোগ, সেই জখম পা নিয়ে একের পর এক সরকারি হাসপাতাল ঘোরার পরে পচন ধরে যাওয়ায় পা খোয়ালেন সরকারি বাসের এক কর্মী। এ জন্য সরকারি হাসপাতালের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছেন পরিবারের লোকজন।
গত ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় বালি টোলপ্লাজার কাছে হাবরা-দীঘা রুটের বাস থেকে পড়ে যান কন্ডাক্টর মহম্মদ রেজাউল করিম (৪২)। বাসের চাকা তাঁর বাঁ পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাঁকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু জখম এতটাই হয়েছিল যে ওখানে চিকিৎসা করা সম্ভব নয় বলে তাঁকে রেফার করা হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে।
রেজাউল করিমের পরিবার জানিয়েছে, রাতেই উত্তরপাড়া থেকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে তাঁরা রোগীকে নিয়ে রওনা হন। কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হয়। সেখানে শুধু স্যালাইন চালু করে চিকিৎসকেরা রোগীকে নীলরতন সরকার হাসপাতালেই নিয়ে যেতে বলেন। রেজাউলের পরিবারের দাবি, মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, রোগীকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। তাই তাঁরা ভর্তি নিতে পারেন না। ওই অবস্থাতেই রোগীকে ফের নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত প্রায় ৩টে নাগাদ অপারেশন থিয়েটারে শুধু এক্স-রে করা হয়। অভিযোগ, পরের দিন সকালেও চিকিৎসা শুরু না-করে সিটি স্ক্যান করতে বলা হয়। রোগীর পরিবারের বক্তব্য, ‘‘পা দিয়ে গল গল করে রক্ত বেরোচ্ছে। চিকিৎসা না-করে সিটি স্ক্যান করাতে পাঠানোয় আমরা আর ভরসা পাইনি। সোজা বেসরকারি হাসপাতালে যাই। তখন ১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে।’’ মাইকেল নগরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, পা বাদ দিতে হবে। তা শুনে রোগীর পরিবার তাঁকে ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে শনিবার রাতে করিমের বাঁ পা-টি বাদ দেওয়া হয়।
পরিবারের অভিযোগ, এ রকম দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীর আপৎকালীন চিকিৎসা যদি সরকারি হাসপাতালে না হয়, তা হলে তাঁরা কোথায় যাবেন! তাঁদের আরও অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজ রাতেই অস্ত্রোপচার করলে হয়ত পা-টি বাঁচানো যেত।
যদিও এ বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তাই ঘটনাটি জানি না।’’ তবে যখন রেফার করা হয় তখন স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে করা হয়। ফলে ‘রেফার’ করা হাসপাতালেই যাওয়া উচিত। নীলরতন সরকার মেডিক্যালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে রোগীর পরিবার নিয়ম মানবেন, না কি জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করবেন? এ বিষয়ে অবশ্য স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেরই বক্তব্য, রোগীকে যেখানেই রেফার করা হোক, পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হলে যে কোনও সরকারি হাসপাতাল ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা করতে বাধ্য।