Congress Meeting

জনবিন্যাস দেখে দলকে সাজানোর বার্তা রাহুলদের

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫ ০৯:১১
Share:
দিল্লিতে বৈঠকের পরে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে, কে সি বেণুগোপাল।

দিল্লিতে বৈঠকের পরে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে, কে সি বেণুগোপাল। ছবি সৌজন্য: এআইসিসি

ভোটের সময়ে জোট হবে কি না, সে প্রশ্ন পরে। আসন-ভাগে কল্কে পেতে হলেও আগে গড়তে হবে সংগঠন। রাজ্যের এলাকাভিত্তিক জনগোষ্ঠীর বিন্যাস অনুযায়ী সংগঠন সাজানো এবং নেতৃত্ব তৈরি করার জন্য বাংলার কংগ্রেসকে স্পষ্ট বার্তা দিলেন রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খড়্গে। সেই সঙ্গেই প্রদেশ নেতৃত্বকে তাঁরা বুঝিয়ে দিলেন, শুধু বিজেপির মোকাবিলায় বাইরে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি’র কথা বললে হবে না। দলের সংগঠনেও সেই নীতি প্রয়োগ করতে হবে।

Advertisement

দিল্লিতে এআইসিসি-র নবনির্মিত দফতর ইন্দিরা ভবনে বুধবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাংলার কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাহুল, খড়্গেরা। ছিলেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল, বাংলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গুলাম আহমেদ মীরও। সূত্রের খবর, সেখানেই প্রদেশ কংগ্রেসের বর্তমান সংগঠনের প্রসঙ্গ উঠেছিল। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা উদাহরণ দিয়ে দেখান, বাংলায় তফসিলি জাতির মানুষের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি কোচবিহার জেলায়। কিন্তু সেখানে টানা কয়েক দশক ধরে জেলা কংগ্রেস সভাপতি উচ্চ বর্ণের। জলপাইগুড়ির সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬টিই সংরক্ষিত। অথচ কংগ্রেসের জেলার শীর্ষে উচ্চ বর্ণের নেতৃত্ব থেকেছেন। আলিপুরদুয়ার বা ঝাড়গ্রামে জনজাতি কোনও নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি দীর্ঘ দিন। এর মাসুল যেমন কংগ্রেসকে দিতে হচ্ছে, তেমনই ফায়দা তুলছে বিজেপি, কখনও আবার তৃণমূল কংগ্রেস। সামাজিক বিন্যাস মাথায় রেখে সংগঠনকে সাজালে বিভিন্ন অংশের নেতৃত্ব তুলে আনতে সুবিধা হয় বলেও সওয়াল করেছেন এক নেতা।

সূত্রের খবর, বাংলার নেতাদের বক্তব্য শুনতে শুনতেই বিরোধী দলনেতা রাহুল হিসেব করে নেন, রাজ্য থেকে আগত ৩১ জনের মধ্যে তফসিলি জাতি ও জনজাতির প্রতিনিধি হাতে-গোনা। নিজের বক্তব্যে দলের এক নেত্রী বলেছিলেন, বাংলায় জাত-পাতের বিচার নেই। কিন্তু রাহুল সেই মত খণ্ডন করে জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি বাংলায় যে প্রায় ৪০% ভোট পাচ্ছে, তার মধ্যে উচ্চ বর্ণের ভোট ১২ থেকে ১৫% হতে পারে। বাকিটা তফসিলি জাতি, জনজাতি অংশ থেকে আসছে। সুতরাং, এই নিয়ে না ভেবে উপায় নেই। সংগঠনে এই জনগোষ্ঠীর বিন্যাস মাথায় রাখার বার্তা দিয়েছেন তিনি। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি খড়্গেও বলছেন, জাতের সংগ্রাম থেকে এখন জাত-বিন্যাসে এসে পৌঁছেছে রাজ্যের রাজনীতি।

Advertisement

বঙ্গে দলের সভাপতি হিসেবে শুভঙ্কর সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পরে নতুন প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি এখনও গঠন হয়নি। নতুন কমিটিতে সব ধরনের জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রাখা হোক, এমনই চাইছে দলের একাংশ। তারই মধ্যে নেতাদের কাছে দলের সব অংশের ‘গুরুত্ব’ না-পাওয়ার পুরনো প্রসঙ্গও দিল্লির বৈঠকে ফের উঠেছে। একটি সূত্রের খবর, প্রাক্তন এক প্রদেশ সভাপতি বৈঠকে বলেছেন, যাঁরা আলোচনায় যোগ দিতে এসেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই যোগ্য। কিন্তু মনোজ চক্রবর্তী, নেপাল মাহাতো, আলি ইমরান রাম্‌জের (ভিক্টর) মতো অনেককেই দেখা যাচ্ছে না, যাঁদের অবশ্যই থাকা উচিত ছিল। বর্তমান প্রদেশ নেতৃত্বের তরফে আবার পাল্টা বলা হয়েছে, এঁদের অনেকেই প্রদেশে বৈঠকে ডাকা হলে আসেন না।

এআইসিসি-র নির্দেশেই বৈঠকের আলোচ্য নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তবে প্রদেশের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘দল তথা সংগঠনকে শক্তিশালী করাই এখন অগ্রাধিকার। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন।’’ বাংলায় রাজনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটিও দ্রুত গড়তে বলেছেন বেণুগোপাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement