বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সভা উপলক্ষে শনিবার ঠাসা ভিড় সিঙ্গুরে।— নিজস্ব চিত্র।
যে সিঙ্গুর থেকে বাম রাজত্বের ক্ষয় শুরু, শনিবার সেই সিঙ্গুর থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর ডাক দিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০১৬-র ভোটযুদ্ধের ঘণ্টাও বাজিয়ে দিলেন সিঙ্গুর থেকেই। কংগ্রেসকে সরাসরি জোটের ডাক দিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘আসুন, জোট বাঁধুন। বুঝিয়ে দিই, এই লড়াইতে আমরা একা নই।’’ সিঙ্গুর থেকে শালবনি পর্যন্ত বাম শ্রমিক সংগঠনের মিছিলের সূচনা মঞ্চ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ দিন তীব্র কটাক্ষ করেছেন বুদ্ধদেব।
তৃণমূলকে সরানোর জন্য কংগ্রেসের হাত ধরতে প্রস্তুত সিপিএম— এ কথা সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত থেকে সূর্যকান্ত মিশ্র, গৌতম দেব পর্যন্ত বিভিন্ন সিপিএম নেতার মুখে একাধিক বার শোনা গিয়েছে গত কয়েক সপ্তাহে। কিন্তু কংগ্রেসের হাত ধরে যাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কখনও কংগ্রেসকে জোটে ডাক দেননি। ব্রিগেডের মঞ্চেও তাঁর মুখে কংগ্রেসের নাম শোনা যায়নি। ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইতে কংগ্রসকে পাশে পাওয়ার আহ্বান জানাতে সম্ভবত সিঙ্গুরের মঞ্চে পৌঁছনোর অপেক্ষাই তিনি করছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূলকে সরাতেই হবে। সব দলকেই ভাবতে হবে সে কথা। আমরা কংগ্রেসকেও বলছি। আপনারা কোন দিকে? এই লড়াইতে আপনারা কোন দিকে? আসুন, জোট বাঁধুন। আসুন, আমরা বুঝিয়ে দিই আসন্ন লড়াইতে আমরা একা নই। এই সরকারকে আমরা সরাবই।’’
মিছিল প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব এ দিন বলেন, ‘‘এই মিছিল প্রতিবাদের মিছিল। অন্যায়ের প্রতিবাদ। ভয়ঙ্কর অন্যায় হচ্ছে পশ্চিমবাংলায়। আমরা রোজ পিছিয়ে যাচ্ছি। ছেলেমেয়েদের কাজ নেই। পাঁচ বছরে একটাও কারখানা হয়নি। স্কুলে-কলেজে-মাদ্রাসায় চাকরি নেই। পশ্চিমবাংলার এত খারাপ অবস্থা কোনও দিন হয়নি। সারা দেশের মানুষ এখন পশ্চিমবাংলার দিকে তাকিয়ে হাসছে।’’ এর পরই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র কটাক্ষ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে। বললেন, ‘‘বেকার ছেলেমেয়েরা কাজ পাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ও সব কী আছে? বেকাররা তোমরা মুড়ি ভাজো। তেলেভাজা ভাজো। ঠাট্টা হচ্ছে! এ কী মুখ্যমন্ত্রী?’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম দেওয়া উৎসব-মেলার সরকারি সংস্কৃতিকেও বুদ্ধ এ দিন তীব্র আক্রমণ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘বেকারের পেটে ভাত নেই। আর রোজ উৎসব হচ্ছে। কিছু বললেই বলছে, আমরা মজা করব না? বেকাররা কাজ পাচ্ছে না, আর আমরা মজা করব!’’ মেলা আর উৎসব বন্ধ করার পরামর্শ দিয়ে বুদ্ধ বলেন, মা-মাটি-মানুষের যাত্রাপালা বন্ধ কর। সমাবেশে হাততালির রোল ওঠে।
তবে কংগ্রেসকে খোলা মঞ্চ থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর আহ্বানই এ দিনের কর্মসূচির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।