পথে নামতে উদ্যোগ চাই, দলকে বার্তা দিলেন বুদ্ধ

লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে সিপিএম-সহ বামেরা কি একেবারে ঘরে ঢুকে গিয়েছে! গাজা নিয়ে মিছিল আর কখনও সখনও কিছু অবস্থান কর্মসূচি ছাড়া পথে বিশেষ দেখা যাচ্ছে না কেন তাদের? লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরের আড়াই মাসে বারেবারেই এমন প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। পরিস্থিতি আঁচ করে এ বার মাঠে নামার জন্য আরও ‘উদ্যোগী’ হতে দলকে পরামর্শ দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জানিয়ে রাখলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাজকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে যাওয়ারই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২২
Share:

লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে সিপিএম-সহ বামেরা কি একেবারে ঘরে ঢুকে গিয়েছে! গাজা নিয়ে মিছিল আর কখনও সখনও কিছু অবস্থান কর্মসূচি ছাড়া পথে বিশেষ দেখা যাচ্ছে না কেন তাদের? লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরের আড়াই মাসে বারেবারেই এমন প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। পরিস্থিতি আঁচ করে এ বার মাঠে নামার জন্য আরও ‘উদ্যোগী’ হতে দলকে পরামর্শ দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জানিয়ে রাখলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাজকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে যাওয়ারই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

বামেদের আন্দোলন-বিমুখতা নিয়ে সাম্প্রতিক কালে বাম শিবিরেই একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। দল ছাড়ার সময় বেশ কিছু নেতা-কর্মী এই আন্দোলনহীনতাকেই কারণ হিসাবে খাড়া করার চেষ্টা করেছেন। এমতাবস্থায় দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুজফ্ফর আহমেদের (কাকাবাবু) ১২৬তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তাঁরা ময়দান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন না। সংগঠনকে একটু সাজিয়ে নিয়ে, মতাদর্শগত ভিত একটু মজবুত করার প্রয়াসের মধ্যেই তাঁরা পথে নামার লক্ষ্যে অবিচল আছেন। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে মঙ্গলবার কাকাবাবু-স্মরণের মঞ্চ থেকে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু বলেছেন, “আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। মানুষের পাশে আমাদের থাকতে হবে। বামপন্থীদের বলব, আর একটু সতর্ক হোন। আর একটু উদ্যোগী হোন! মানুষ তেমনই চাইছেন।”

তৃণমূলের জমানায় রাজ্যে ঘটনার পরে ঘটনা বয়ে চলে গেলেও তাকে কার্যকরী আন্দোলনের রূপ দিতে সিপিএম ব্যর্থ হচ্ছে বলে সমালোচনা হয়েছে সাম্প্রতিক কালে। নানা ঘটনায় স্থানীয় স্তরে সিপিএমের সংগঠন ঠিক সময়ে ঠিক ভাবে সক্রিয় হয়নি বলেও দলের অন্দরেই ক্ষোভ আছে। বুদ্ধবাবু এ দিন ‘উদ্যোগী’ হতে বলে সাংগঠনিক স্তরে সেই শিথিলতাই কাটিয়ে উঠতে পরামর্শ দিয়েছেন বলে সিপিএমের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা। একই সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের বলেছেন, “আমরা চেষ্টা করছি, মতাদর্শগত ভাবে নিজেদের আরও উন্নত করতে। মানুষ যে ভাবে পার্টিকে দেখতে চাইছেন, সেই দিকেই নিয়ে যেতে চাইছি। এই কাজ নিশ্চয়ই পারব! মানুষের কাছে বলতে পারব, আমরা আছি আপনাদের সঙ্গে।”

Advertisement

কাকাবাবুর জন্মদিনের বাৎসরিক অনুষ্ঠান আগে সচরাচর হতো মহাজাতি সদনের মতো প্রেক্ষাগৃহে। এখন হল পাওয়া নিয়ে সরকারি টালবাহানার অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সিপিএম নেতৃত্ব এ বার সেই অনুষ্ঠান সরিয়ে এনেছিলেন দলের কলকাতা জেলা কার্যালয় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে। সেখানে ভিড় উপচে পড়েছিল এ দিন। আর সেই অবসরেই বুদ্ধবাবু, দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এবং বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র প্রত্যেকেই বামফ্রন্টের বাইরে বামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে নিয়ে একজোট হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেছেন। সূর্যবাবু ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন, তাঁরা বামফ্রন্টের বাইরের শক্তিগুলির কথা বলছেন, দল নয়। কারণ, দল বললেই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলবেন কংগ্রেসকেও কি এর মধ্যে রাখবেন? বামফ্রন্টের বাইরে বাম ঐক্যকে প্রসারিত করার জন্য বামেদের মধ্যে সব চেয়ে সক্রিয় এখন সিপিআই। বিহারে বিধানসভা উপনির্বাচনেই সিপিএম-সিপিআই এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন আসন সমঝোতা করেছে। বিমানবাবু, সূর্যবাবুরা এ দিন এ রাজ্যেও বৃহত্তর বাম শক্তির পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন।

ঘটনাচক্রে, এ দিনই রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক শিবদাস ঘোষের জন্মদিন উপলক্ষে বাৎসরিক সমাবেশে এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনে বহু কাজকর্মই বামপন্থার পক্ষে ‘ইতিবাচক’ ছিল না। সিপিএম এ কথা স্বীকার করে নিলে তা হলেই তাদের সঙ্গে এসইউসি ভবিষ্যতে কাজ করতে পারে। প্রভাসবাবু বলেন, “প্রথম যুক্তফ্রন্টে আমরা সিপিএমের সঙ্গেই সরকারে ছিলাম। সেই সময়েই সিপিএমের কাজকর্ম দেখে এ রাজ্যে বামপন্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন শিবদাস ঘোষ। পরবর্তী কালে তাঁর আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে।”

কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের ‘উগ্র’ এবং রাজ্যে তৃণমূল সরকারের ‘নরম’ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন বিমানবাবুরা। ইঙ্গিতে সূর্যবাবু বলেছেন, “ইঁদুরেরা মিটিং করে বলতে পারে, বিড়ালের গলায় বাঁধতে হবে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা তারা বাঁধতে পারবে না! সে কাজ আমাদেরই করতে হবে!” ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাসবিদ হিসাবেই সদ্যপ্রয়াত অমলেন্দু দে-কে এ দিন পুরস্কৃত করা হয়েছে তাঁর ‘সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে’ গ্রন্থের জন্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement