(বাঁ দিকে) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সীতরাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।
নানা ব্যস্ততার ফাঁকে সচরাচর একেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁর লেখা এসে পৌঁছতো। লেখা চেয়ে এ বারও চিঠি গিয়েছিল। তবে উত্তরে আর লেখা আসেনি। তার মাঝে আকস্মিক ভাবে মানুষটাই চলে গিয়েছেন! দলীয় মুখপত্রে এ বার তাঁর স্মৃতিচারণ। সেই সঙ্গে তাঁর প্রতি উপযুক্ত সম্মানে আরও বেশি আন্দোলনের ডাক।
চলে গিয়েছেন আরও এক জন। অসুস্থতার কারণে ইদানিং অবশ্য তাঁর লেখা অনিয়মিতই হয়ে পড়েছিল। ঘটনাচক্রে, যে দিন এই শহরে তাঁর শেষ যাত্রা হচ্ছিল, সে দিনই প্রকাশ্যে এসেছিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা। একই দিনে শেষ যাত্রা হওয়া প্রবীণ ও নবীন দু’জনের প্রতিই শ্রদ্ধা জানাতে এ বার উৎসবের সময়ে উঠে এসেছে ‘চ্যালেঞ্জ’ অতিক্রম করার কথা। যে লড়াইয়ে মুখ্য ভূমিকায় দলের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম।
সিপিএমের দুই মুখপত্রের জোড়া পুজোসংখ্যায় এ বার স্মৃতির পাতায় সীতরাম ইয়েচুরি ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাঁচ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রয়াত হয়েছেন দু’জনে। পুজোসংখ্যার জন্য আবেদনের চিঠি পেয়েও লেখা হয়ে ওঠেনি ইয়েচুরির। দলের সাধারণ সম্পাদকের স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছেন বয়সে প্রবীণ বিমান বসু। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন রবীন দেব। বুদ্ধদেবের পুরনো লেখা আর্কাইভ থেকে নিয়ে ফের প্রকাশ করা হয়েছে এই পুজোয়। তেমনই ইয়েচুরির পুরনো সাক্ষাৎকার, পুরনো লেখা জায়গা পেয়েছে। যেখানে তিনি স্বৈরতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নে দ্ব্যর্থহীন।
দলের দুই পুরনো, পরিচিত নেতার প্রয়াণের পরে সিপিএমের প্রথম পুজোসংখ্যায় বর্তমান সময়ের লড়াই, নতুন চ্যালেঞ্জের কথা উঠে এসেছে সিপিএমের তরুণ নেতৃত্বের লেখনীতে। দলের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে মানুষের প্রতিবাদের প্রসঙ্গ ধরে চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের কথা বলেছেন। তরুণ, জনজাতি নেত্রী সোনামণি টুডুও তুলে এনেছেন তাঁদের লড়াইয়ের কথা। নির্বাচনী লড়াইয়ে তরুণ প্রজন্মকেই ইদানিং সামনে রেখেছে সিপিএম। সংগঠনেও ওই অংশকে গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে আসন্ন সম্মেলন-পর্বে। দলের একাংশের মতে, মুখপত্রের পুজোসংখ্যায় সেই ভাবনারই ছাপ।
মীনাক্ষী লিখেছেন, ‘সমাজে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের কণ্ঠগুলোকে দুর্বল করে দিতে চাইছে শাসক দল...। এই সব চ্যালেঞ্জকে মেনে নিয়েই মানুষ পথে নেমেছে, যুব সমাজ পথে নেমেছে। এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতেই হবে। ভবিষ্যতে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য তৈরি হতে আজকের চ্যালেঞ্জ পার করবই’।
ইয়েচুরির আকস্মিক প্রয়াণের কথা উল্লেখ করে তাঁর কথা উদ্ধৃত করেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম পুজোসংখ্যায় বলেছেন, বাংলায় বামপন্থার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে। আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে উত্তাল প্রতিবাদের প্রসঙ্গ এসেছে তাঁর প্রবন্ধে। সেই সূত্রেই তিনি বলেছেন, ‘শৈত্যের মতো আন্দোলনে যাতে কোনও জড়তা না আসে, নতুন বসন্ত যাতে এ বাংলায় নেমে আসে, নতুন যে দায়িত্ব এবং সম্ভাবনা সময় হাজির করেছে আমাদের দ্বারে, তাকে নিয়ে আমাদের চেনা পরিসর ছেড়ে বেরোতে হবে। যেতে হবে আরও মানুষের কাছে। নতুন মানুষের কাছে— জয়ের লক্ষ্যে’। গত পার্টি কংগ্রেসে ঠিক হওয়া দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে অন্য একটি প্রবন্ধে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের আহ্বান, ‘কমিউনিস্ট পার্টি শুধুই সরকারের দূরভিসন্ধিমূলক কাজগুলিকে আটকে দেবে, তা-ই নয়। তার শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাম বিকল্প যেমন প্রচার করবে, তেমনই গঠনমূলক কাজ (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, কর্মসংস্থান, নারী সুরক্ষা ইত্যাদি) গড়ে তুলবে’।