Flood situation in North Bengal and Sikkim

২৪ ঘণ্টা নজর উত্তরে, প্রস্তাব নয়া পথ তৈরিরও

উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে প্রাক বর্ষার মরসুম থেকেই ভারী বা অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তার ফলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমতলের সঙ্গে কালিম্পং ও সিকিম সংযোগকারী এবং ‘লাইফলাইন’ বলে পরিচিত ১০ নম্বর জাতীয় সড়কটি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ০৭:৩৫
Share:

অতিভারী বৃষ্টির ফলে ভয়ঙ্কর অবস্থা তিস্তার। ছবি: পিটিআই।

উত্তরের পাহাড়ে টানা বৃষ্টি এবং তার জেরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিপর্যস্ত অবস্থা নিয়ে এ বারে নড়েচড়ে বসল কেন্দ্র ও দুই রাজ্য প্রশাসন। সোমবার নবান্নে বৈঠক করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিলেন, অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত কন্ট্রোল রুম খুলে নবান্ন থেকেই ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হবে। একই কাজ চলবে জেলাগুলি থেকেও। এই দিনই সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিংহ তামাং আরও এক বার আর্জি জানান, ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের দায়িত্ব যেন কেন্দ্রীয় সরকার নেয়। সোমবারই কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রক (মর্থ)-এর সচিব অনুরাগ জৈনের সঙ্গে দুই রাজ্যের প্রতিনিধিদের বৈঠকে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিকল্প রাস্তা তৈরি করতে আপাতত রাজি হয়েছে কেন্দ্র। বিপুল খরচ হতে পারে জেনেও এই ব্যাপারে তারা ইতিবাচক ইঙ্গিতই দিয়েছে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে প্রাক বর্ষার মরসুম থেকেই ভারী বা অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তার ফলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমতলের সঙ্গে কালিম্পং ও সিকিম সংযোগকারী এবং ‘লাইফলাইন’ বলে পরিচিত ১০ নম্বর জাতীয় সড়কটি। এ দিন অবশ্য বৃষ্টি কিছুটা কমায় এ রাজ্যে ওই সড়ক লাগোয়া এলাকায় নতুন করে ধসের খবর নেই। তবে সিকিমের দিকে এ দিনও কোথাও কোথাও মাটি ধসেছে।

এই পরিস্থিতিতে সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আওতায় নবান্নের কন্ট্রোল রুম চালু হবে, যেখান থেকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হবে। জেলার কন্ট্রোল রুমে আট ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করবেন অফিসারেরা। থাকবে টোল-ফ্রি নম্বরও। একই সঙ্গে কয়েকটি বিষয়ে নজরে আনার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমত, তাঁর ‘পরামর্শ’, বর্ষার মরসুমে পাহাড় এড়িয়ে চলুন পর্যটকেরা। একই সঙ্গে বর্ষায় তিস্তার পাড় ভাঙার ব্যাপারে নজরদারি চালাতে বলেও, তিনি মেরামত বাবদ খরচের দায়িত্ব জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ঘাড়েই ঠেলে দেন। এ দিনও তিনি সিকিমের ১৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। দ্বিতীয়ত, ভুটান নিয়েও এ দিন উদ্বেগের কথা শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভুটানের জলে ভাসে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি। সুতরাং আমরা হচ্ছি সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত (সাফারার)। কারণ, বাংলাটা দেখতেই একটা নৌকোর মতো।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করেও আমরা এ সবের থেকে রেহাই পাচ্ছি না।’’ তৃতীয়ত, তিনি রাস্তার প্রশ্নে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতেও নির্দেশ দেন। মমতার নির্দেশ, রাস্তা এবং নদীর পাড় ভাঙছে। ফলে সেনাবাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে সেগুলির মেরামতির উপর নজরদারি করতে হবে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের।

Advertisement

এমন জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কর্মীদের ছুটি যে বাতিল হতে পারে, সে সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে বলে প্রশাসনিক সূত্রের অনুমান।

মমতার মতোই এ দিন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিংহ তামাংও জানিয়েছেন, রোজ ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে। এ দিনই জাতীয় সড়ক নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক ছিল পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের। সেখানে প্রেমের রাজ্যের প্রতিনিধিরা নতুন রাস্তার প্রস্তাব রাখেন। এই রাস্তাটি তৈরি করতে চার-পাঁচ বছর সময় লাগবে এবং খরচও হবে বিপুল। তবু সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কারণে এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। আপাতত জাতীয় সড়ক ১০-এর যে অংশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, উপত্যকার দিকের সেই অংশগুলি মেরামতের কাজ করবে রেলের সংস্থা ইরকন। সেই সংস্থা প্রধানত ওই এলাকায় রেল পরিকাঠামো তৈরির কাজও করছে। পাহাড় সংলগ্ন রাস্তার কাজ করবে এ রাজ্যের পূর্ত দফতর।

এক কর্তার কথায়, “অর্থ যে কোনও সমস্যা হবে না, স্থায়ী সমাধানের স্বার্থে তা জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। নতুন রাস্তা তৈরিতে সময় লাগবে বলে প্রাথমিক ভাবে বর্তমান রাস্তার সংস্কার হবে। তৈরি হবেনতুন পথও।”

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মেলি থেকে জাতীয় সড়ক ১০ তিস্তাবাজারে মিশছে। সেই রাস্তাটাতেই প্রায় নিত্য সমস্যা লেগে রয়েছে। সেই কারণে প্রস্তাব হয়েছে, তিস্তা বাজারে না মিশিয়ে নদীর বাঁ-পাশ দিয়ে নতুন রাস্তা পৌঁছে দেওয়া হোক সেবক পর্যন্ত। প্রস্তাবিত নতুন ওই অংশটির দৈর্ঘ হবে আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার।

বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, ওই জাতীয় সড়ক গুরুত্বের দিক থেকে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রায় নিয়মিত ক্ষতি হওয়া ঠেকাতেস্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে চাইছে সব পক্ষই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement