বিক্ষোভে ফেটে পড়েন লালনের পরিবারের সদস্য এবং অনুগামীরা। ফাইল চিত্র।
পরিস্থিতি যে তেতে উঠবে, সে আশঙ্কা ছিলই। সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যু ঘিরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তাল হল রামপুরহাটের বগটুই। লালনকে সিবিআই খুন করেছে —এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সকাল থেকেই লালনের পরিবারের সদস্য এবং অনুগামীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন।
সোমবার লালনের মৃত্যুর পরে জাতীয় সড়কের উপরে বগটুই মোড়ে রাতে কিছু ক্ষণের জন্য অবরোধ করেছিলেন মৃতের পরিজনেরা। এ দিন সকালে বগটুই গ্রাম থেকে সাত কিলোমিটার দূরে রামপুরহাট থানার মাঝখণ্ড মোড় সংলগ্ন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অতিথিশালায়, সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়। বগটুই গ্রামের ভিতর থেকে টোটোতে মাইক বেঁধে মহিলাদের চাপিয়ে সিবিআই শিবিরের সামনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ছিলেন লালন শেখের স্ত্রী রেশমা বিবি, লালনের মেয়ে, ভাগ্নি-সহ আরও অনেকে। অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন লালনের পরিজন ও বগটুইয়ের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, অভিযুক্ত সিবিআই আধিকারিকদের গ্রেফতার করে সাজা দিতে হবে। রেশমারা বলতে থাকেন, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না সিবিআই আধিকারিকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, কেউ আমরা এখান থেকে সরব না।’’
পরিস্থিতি আঁচ করে আগেই ক্যাম্প অফিসের নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছিল। একটা সময় অফিসের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা গার্ডরেল হটিয়ে জোর করে অস্থায়ী সিবিআই ক্যাম্প অফিসে ঢোকার চেষ্টা করেন শতাধিক বিক্ষোভকারী। তাঁদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় পুলিশ এবং সিআরপিএফ জওয়ানদের। শেষ পর্যন্ত বুঝিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করা হয়। অনেক কষ্টে, এক প্রকার জোর করেই লালনের স্ত্রীকে পুলিশ রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে যায় লালনের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে বলে।
ও দিকে, দফায় দফায় ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেন গ্রামবাসী। গার্ডরেল আড়াআড়ি রেখে অবরোধ, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বেশ কয়েক জন মহিলা রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ করেন। অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া বাকি সব ধরনের যানবাহন আটকে দেন অবরোধকারীরা। বিশাল যানজট জাতীয় সড়কে। রামপুরহাট শহরে ঢোকার মুখ থেকে মল্লারপুর ছাড়িয়ে বাস-ট্রাক-সহ দূরপাল্লার যানবাহন আটকে পড়ে। প্রায় চার ঘণ্টা পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। পরে হাসপাতাল থেকে ফের ক্যাম্প অফিসের সামনে ফিরে আসেন রেশমা বিবি।
লালনের নিজের গ্রাম বগটুই এ দিন ছিল থমথমে। গ্রামের পূর্বপাড়ায় বাস নিহত তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের পরিবারের। ওই পাড়াতেই থাকেন ভাদু-খুনের পরে যে ১০ জনকে পুড়িয়ে-কুপিয়ে মারা হয়, তাঁদের আত্মীয়-পরিজন। লালন ধরা পড়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিল স্বজনহারা পরিবারগুলি। তাদের দাবি ছিল, ২১ মার্চ রাতে বগটুইয়ে হামলার মূলে ছিলেন লালন শেখ। সেই লালনের সিবিআই হেফাজতে মৃত্যুর পর থেকেই মুখে কুলুপ স্বজনহারাদের।
গ্রামে নতুন করে অশান্তি এড়াতে পুলিশের নজরদারি অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় সড়কের বগটুই মোড় থেকে লালন শেখের বাড়ি পর্যন্ত জায়গায় জায়গায় পুলিশের পাহারা দেখতে পাওয়া গিয়েছে।